আপডেট :
১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১:৩৩:৪৫
সারাদেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা দুই হাজার ৫৯৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ৯৪ জন। বাকিরা সবাই পুরুষ। কারা সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশের ৫৪ বছরের কারা ইতিহাসে এখনও কোনো নারীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়নি। এমনকি গাজীপুরের কাশিমপুরে একমাত্র নারী কারাগারেও নেই কোনো ফাঁসির মঞ্চ।
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, অনেকে মনে করেন ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়। আমরা মৃত্যুদণ্ডাদেশ বন্দিদের সেলে রাখি। কোনো সেলে একজন থাকেন, আবার কোনো সেলে একাধিক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি থাকেন। তবে দেশে এখনও কোনো নারী আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়নি।
কারা সূত্র আরও বলছে, সোমবার পর্যন্ত কারাগারে সব মিলিয়ে বন্দির সংখ্যা ৮২ হাজার। বর্তমানে ১৪টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৬০টি জেলা কারাগার রয়েছে। ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৭৭ জন। এই হিসাবে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দি আছে।
পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীকে খুনাখুনির মতো অপরাধে জড়াতে দেখা গেলেও কেন এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়নি– এমন প্রশ্নে সাবেক ডিআইজি (প্রিজন্স) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, আমাদের সমাজের অনেকের প্রচলিত ধারণা, নারীদের ফাঁসি দেওয়া হয় না। আসলে বিষয়টি তা নয়। আইনের কোথাও বলা নেই, নারীদের ফাঁসি দেওয়া যাবে না। ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হলে বেশ কয়েকটি আইনি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের বিষয় আসে। তবে এখনও সবকটি আইনি ধাপ সম্পন্ন করে কোনো নারীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়ার নজির নেই। তাই অনেক নারী ফাঁসির দণ্ড নিয়ে বছরের পর বছর কারাগারে থাকলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি।
তিনি বলেন, এক সময় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের সেলের বাইরে বের হতে দেওয়া হতো না। কারারক্ষীদের প্রহরায় স্বজনরা তাদের সেলে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপরই সাক্ষাৎ করতেন। একসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচজন স্বজন যেতে পারতেন। পরে এই নিয়ম বদলানো হয়। অন্য বন্দিদের স্বজনদের মতো ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির আত্মীয়স্বজন তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
শামসুল হায়দার সিদ্দিকী আরও বলেন, কারাগারের নিয়ম-প্রথা নিয়ে বাইরের মানুষের মধ্যে নানা মিথ রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, দেশে রমজানে কারও ফাঁসি কার্যকর হয় না। আইনে এমন কিছু বলা নেই। তবে সাধারণ মুসলিম দেশ হিসেবে রমজানে কারও ফাঁসি কার্যকর করা হয় না।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আলোচনায় উঠে এসেছে তার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টিও।
বর্তমানে বাংলাদেশের কারাগারে ৯৪ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারী কয়েদির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। সেখানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৪ জন নারী কয়েদি আছেন।
সূত্র: সমকাল