আপডেট :
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:১২:১১
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মিছিলের পরে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের দিকে সন্ধ্যায় মিছিল করেছেন বামপন্থি দলগুলোর নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরের মতোই এদের মিছিলও ডেপুটি হাইকমিশনের ২০০ মিটার আগেই থামিয়ে দেয় পুলিশ।
বামপন্থিরা অবশ্য ব্যারিকেড ভাঙার কোনো চেষ্টাও করেননি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্সবাদী (সিপিআই-এম), সিপিআই, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল (এসএসপি), ফরোয়ার্ড ব্লক এতে অংশ নেয়।
বামপন্থি নেতাদের বক্তৃতায় মূল সুর ছিল—তাদের ভাষায় ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে’। তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের প্রসঙ্গের সঙ্গেই সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপরে হামলার বিরোধিতাও করেন। তাদের ভাষ্য, ‘ধর্মান্ধতার পাল্টা ধর্মান্ধতা হতে পারে না’।
সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম তাদের এই মিছিলের বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে, সেক্যুলার ডেমোক্রেসিকে আক্রমণ করা হচ্ছে। যা কিছু মুক্ত চিন্তা প্রতীক, যা কিছু স্বাধীনতার প্রতীক এগুলো আক্রান্ত হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’
‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়’ এবং সেটা বাংলাদেশে ও ভারতে দুই জায়গাতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি’।
এর আগে দুপুরে ডেপুটি হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ডেপুটি হাইকমিশনের প্রায় ২০০ মিটার দূর পর্যন্ত মোট তিনটি ব্যারিকেড দিয়েছিল পুলিশ। সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণ পরই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে, এক পর্যায়ে প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে তারা। এরপর দ্বিতীয় ব্যারিকেড পর্যন্ত তারা পৌঁছে যাওয়ার পর পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন কলকাতার সমালোচিত সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন তিনি।
রক্তাক্ত শার্ট পরিহিত ছবি দিয়ে ময়ূখ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য প্রতিবাদ করতে এসে, কলকাতায় লাঠির বাড়ি খাওয়া সনাতনীদের রক্ত লেগে আমার জামায়। নাক-মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একা ছিল না। সব্বাই জাপটে ধরেছে। এভাবেই জামাটা থাকবে। এই দাগ লাগা জামাটা অনেককিছু বদলে দেবে মিলিয়ে নেবেন। সবকিছু মনে রাখা হবে। সব কিছু।’
অন্যদিকে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে উগ্র-হিন্দুত্ববাদীরা। এ সময় তারা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশন অভিমুখে মারমুখি যাত্রা করে। তবে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশনে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য সরকারি বেশ কিছু বাস ‘বাধা হিসেবে’ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিশাল এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের ‘শক্তিশালী ফোর্স’ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশ হাইকমিশনের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করলেও, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ব্যারিকেড ভেঙে কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা কমপক্ষে দুটি স্তরের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ড ধরে দূতাবাসে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।