সংসদে বিরোধী দল নেই, রাস্তায়ও প্রতিরোধ নেই তবু বাকযুদ্ধ শুরু হলো
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ২:০৩:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সম্প্রতি এক জনসভায় বলেন,“এই সরকার গণতন্ত্রের রূপ ধরে একচেটিয়া শাসন চালাচ্ছে। সংসদ হোক বা বিচার বিভাগ সবকিছুই আজ সরকারের ইশারায় চলছে।”
এই মন্তব্যের পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
কী ছিল সেই বক্তব্য?
রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় গয়েশ্বর বলেন:“আমরা এখন এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি, যেখানে নির্বাচন মানে শুধু সাজানো খেলা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান সরকার কব্জায় রেখেছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন,“তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসা পর্যন্ত দেশে কোনো সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহারে রাষ্ট্র আজ গলদঘর্ম।”
সরকারের জবাব: ‘এটি পুরনো অ্যালবাম’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন,“বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা এখন পুরনো কথার অ্যালবাম বাজিয়ে ফের আলোচনায় আসতে চায়।”
সরকারি শিবিরের দাবি, দেশে প্রতিটি নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হয়েছে এবং জনগণ তাদের রায়ের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এনেছে।
রাজনীতি বনাম বাস্তবতা
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন,“সরকার যদি গণতান্ত্রিক চর্চা করে থাকে, তাহলে বিরোধীদের বক্তব্য বা আন্দোলনকেও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,“বিএনপি’র বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি ক্ষমতা কাঠামোর ওপর একটি প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরছে, যা অস্বীকার করা সহজ নয়।”
জনগণের মনোভাব
নির্বাচনের আগে জনগণের নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে।
একজন চাকরিজীবী বলেন,“সংসদে শুধু সরকার পক্ষ। তাই সরকারের ভুলগুলো ধরার কেউ নেই।”
একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন,“বিএনপি যদি বাস্তব বিরোধী দল হতে চায়, তাহলে কেবল বক্তব্য নয়, সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপও দিতে হবে।”
মিডিয়ার ভূমিকা
মিডিয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সংঘাত বা তর্জার মধ্যেও গঠনমূলক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া দরকার।
বর্তমানে দেশের অনেক মিডিয়া হয় সরকারপন্থী, নয়তো একেবারে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এই বাস্তবতায় 'বিস্ফোরক বক্তব্য' কেবল শিরোনাম তৈরি করে, পরিবর্তন নয়।
কেবল বাকযুদ্ধ নয়, দরকার বিশ্বাসযোগ্যতা
গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি সেই বাক্যের পেছনে বিশ্বাসযোগ্যতা।
সরকারকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি বিরোধী দলকে চাই সংগঠিত ও কার্যকর ভূমিকা।নইলে ‘বিস্ফোরক মন্তব্য’ কেবল মিডিয়া শিরোনাম হয়ে থাকবে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনবে না।