প্রকাশিত :
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:১৮:০০
অ্যাম্বুলেন্স; মুমূর্ষু রোগীদের উচ্চতর চিকিৎসার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের বাহন। মানুষকে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ধারণা বহু পুরনো। ইতিহাসে অ্যাম্বুলেন্স শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘অ্যাম্বুলেন্ট’ থেকে, যার অর্থ চলমান বা চলতে সক্ষম।
৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রথম অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রা শুরু হয়। ১৪৮৭ সালে স্পেনের কুইন ইসাবেলা প্রথম সংগঠিত যুদ্ধক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা চালু করেন। ১৭৯২ সালে ফরাসি সার্জন ডমিনিক জ্যাঁ ল্যারি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের ধারণা দেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুতগতির ঘোড়ায় টানা গাড়ি তৈরি করেন, যা আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কাজ করত। তাকেই আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের জনক বলা হয়।
১৯০৬ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে মোটরচালিত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহৃত হয়। সেই থেকে আজ অবধি অ্যাম্বুলেন্সের আধুনিকিকরণ করা হয়েছে। সাধারণ মোটরচালিত অ্যাম্বুলেন্স থেকে বর্তমানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সও ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে অ্যাম্বুলেন্সে প্রথমবার অক্সিজেন, স্ট্রেচার, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম যুক্ত হয়। ১৯৭০-এর পরে আধুনিক লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, মনিটর, ডিফিব্রিলেটর ইত্যাদি যোগ হয়ে অ্যাম্বুলেন্স মোবাইল হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়।
অ্যাম্বুলেন্স বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তারমধ্যে রয়েছে—
বেসিক লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স: এসব অ্যাম্বুলেন্সে থাকে স্ট্রেচার, অক্সিজেন, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্যারামেডিক বা ইএমটি।
অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স: এটি প্রায় মোবাইল আইসিইউ। এসব অ্যাম্বুলেন্সে থাকে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প, উন্নত লাইফ সাপোর্ট কিট, ট্রেইনড প্যারামেডিক দল।
নিউবর্ন বা নিওনেটাল অ্যাম্বুলেন্স: নবজাতক শিশু পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয় এই অ্যাম্বুলেন্স। এতে থাকে ইনকিউবেটর, বেবি ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (হেলিকপ্টার বা এয়ারক্রাফ্ট): দ্রুত দূরপাল্লার চিকিৎসা পরিবহনে এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহৃত হয়। এটিতে থাকে উন্নত লাইফ সাপোর্ট, ডাক্তার, নার্স।
ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স (বোট অ্যাম্বুলেন্স): দ্বীপাঞ্চল, নদীভিত্তিক এলাকা বা উপকূলে ব্যবহৃত হয়।
মোবাইল ক্লিনিক বা ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স: শুধু রোগী পরিবহন নয়, চিকিৎসাও দিতে পারে।
বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স: এর মধ্যে রয়েছে বেবি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার রেসকিউ অ্যাম্বুলেন্স, স্পেশাল ডিজাস্টার অ্যাম্বুলেন্স, কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স, ভেটেরিনারি অ্যাম্বুলেন্স।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য কাতারের রাজপরিবারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেটির মডেল এ-৩১৩। এই অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে উন্নত জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও শব্দরোধী ব্যবস্থা, যা বিমানের চাপ কমাতে এবং রোগীর আরাম বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রিয়েল-টাইম যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অনবোর্ড মেডিকেল টিম হাসপাতলে থাকা
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে সক্ষম। এতে রয়েছে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প এবং উন্নত কার্ডিয়াক মনিটর। এছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য স্টোরেজও রয়েছে। এই অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের রাজকীয় মেডিকেল ইউনিটের চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক থাকেন। এই দলটি হৃদরোগ বা ট্রমাজনিত ঘটনাগুলোর মতো জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য দক্ষ।
কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি একটানা প্রায় ১১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার উড়তে সক্ষম। এছাড়াও ছোট রানওয়েতে অবতরণের ক্ষমতা এটিকে যেকোনো বিমানবন্দরে অবতরণে সাহায্য করে। এই অ্যাম্বুলেন্সে করেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন।