প্রকাশিত :
২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৬:৩৮
আগামী সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এরা সরে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আরও জানা গেছে, মাহফুজ ও আসিফের পদত্যাগের বিষয়টি ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।
নির্বাচনে অংশ নিতে তফসিল ঘোষণার আগেই পদত্যাগ করবেন তারা। এ পদত্যাগকে কেন্দ্র করে উপদেষ্টা পরিষদে আসতে পারে নতুন মুখ।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মধ্যে উল্লিখিত দুজন উপদেষ্টা বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে পারেন।
সূত্র মতে, নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য তারিখ আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। তার আগে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে ভোটার তালিকা।
পদত্যাগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব। এমন কোনো আইন নেই যে-উপদেষ্টা হলে নির্বাচন করা যাবে না। তবে নীতিগত কারণে উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচন করা ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা এখনো ঠিক করিনি। শুধু দুজন ছাত্র উপদেষ্টা নন, আরও কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারেন।’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আগে কুমিল্লার ভোটার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, তিনি হয়তো এই আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। বিএনপি এই আসনে কোনো প্রার্থী এখনো ঘোষণা করেননি।
এর আগে ৯ নভেম্বর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা থেকেই নিশ্চিতভাবে নির্বাচন করব। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে আছে। ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন।
অপরদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, ‘২ মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি-আমি কবে পদ ছাড়ব, তা এখনো জানি না।’
এর আগে, ২৬ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলম বলেন, ‘নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে উপদেষ্টা পরিষদের সভা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত কেবিনেট মিটিং বসে না।’
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় আগামী বছরের ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারি—এই তিনটি তারিখ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার, আর ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার।
৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘৮ তারিখের আগে শুক্র ও শনিবার দুই দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ফলে শহরে বসবাসকারী ভোটাররা, বিশেষ করে চাকরিজীবীরা ছুটির দিনে নিজের এলাকায় গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।’
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তৃতীয় জোট গঠনের যে খবর চাউর হয়েছে তা বাস্তবায়নে ধাক্কা খেয়েছে দলটি। দলটির নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠকে অনেক সদস্য জোটে যাওয়ার বিরোধিতা করেন। সম্ভাব্য জোটে এনসিপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতাদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশ থাকলে সেই জোটে যাওয়ার বিরোধিতা করেন এই নেতারা।
এনসিপির সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী কাউন্সিলে যেসব সদস্য নতুন জোটে যাওয়ার বিরোধিতা করেন তারা প্রায় সবাই সরকারে থাকা দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের অনুসারী। এনসিপি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যাবে না তৃতীয় জোটে যাবে তা নিয়ে কিছুদিন থেকে দলের মধ্যে নানামুখী দ্বন্দ্ব চলছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম বিএনপির জোট থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও গণ অধিকার পরিষদ নিয়ে সম্ভাব্য একটি নির্বাচনি জোট গঠনের আলোচনা চলছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ তার অনুসারীরা চান তৃতীয় জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু এমন চিন্তার বিরোধিতা করছেন দলের আরেক অংশ, যারা দুই উপদেষ্টার অনুসারী এবং বিএনপির সঙ্গে তারা জোট গঠনে অধিক আগ্রহী।