আপডেট :
০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:২৮:১০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, একটি দল ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করলেও, এখন জনগণের কাছে ভোট চায়। তারা একবারের জন্য নিজেদের যাচাইয়ের আহ্বান জানালেও, জনগণ ৭১ সালেই তাদের দেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘তখন তারা গণহত্যার পাশাপাশি মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। এখন আবার বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করছে। আমরা মনে করি, যা আমার হাতে নেই তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্পষ্ট শিরক।’
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, ‘সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে এসব ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যাবে। দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হলে সবাইকে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম যেকোনও মূল্যে টেনে ধরতে হবে। না হলে আমাদের দেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ হবে না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস, সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। কাজেই সীমাবদ্ধতার মধ্যে যা করতে পারবো, সে কমিটমেন্টই দিতে পারবো। আমরা এ কালে কী করতে পারবো, শুধু তা বলতে পারবো। যারা বেহেশতের টিকিট বা অন্য কিছুর কথা বলছে, তাদের বিষয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তখন দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সরকার ধীরে ধীরে দুর্নীতি কমিয়ে এনেছে। এখন কোনও কোনও দল আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও ২০০১ সালে আমাদের সঙ্গে তাদের দু’জন মন্ত্রী ছিল। তারা সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ছিল। সত্যিকার অর্থে আমরা দুর্নীতি করলে শেষ দিন পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালালেও বর্তমান নিরপেক্ষ আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপব্যবহার করেছে। আগেও তাদের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি করেছি। এসব বাহিনীর মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়েছে। এখনও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সম্ভব।’
তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপির একটিই কথা, দেশ গড়তে হবে। গত দেড় বছরে অনেক আলাপ হয়েছে। মিডিয়ায় সংস্কারের বিষয়ে নানা কথা হয়েছে। অথচ বিএনপি স্বৈরাচার সরকারের আমলে তিন বছর আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অতীতে দেশ যখন সংকটের দিকে যাচ্ছিল, তখন মানুষ বিএনপিকে ক্ষমতা দিয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে দেশের আইন, শিক্ষা, অর্থ ও কৃষি খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলাম। আগামীতে একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।’
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরে অরাজকতা বিরাজ করছে। আমরা দেশের সার্বিক বিষয়- নারী, শিক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেছি। শিক্ষকদের নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। এসব বিষয় জনগণকে বোঝাতে হবে। আগামীতে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হলে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, পরিকল্পনার পক্ষে জনগণের রায় পেলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর নয়, স্বাবলম্বী বাংলাদেশ চাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি, এখনও দলের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় যেতে হবে। আমরা আশা করি একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’