আপডেট :
১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৬:৪৩
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে একটি বড় অংশ ভোটে দেখতে চান না। তবে বিনা শর্তে অথবা শর্ত দিয়ে নির্বাচনে চান বেশির ভাগ মানুষ।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’ শীর্ষক জরিপে মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড এই জরিপটি পরিচালনা করেছে।
এতে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণঅভ্যুত্থানে পতিত দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ সম্পর্কে আপনার মতামত কী? এই প্রশ্নে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বিনা শর্তে আওয়ামী লীগকে ভোটে অংশ নিতে দেওয়া উচিত। ২৬ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, শাস্তি ও সংস্কার হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া শুধু শর্ত দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যায়, এমন উত্তরদাতা দশমিক ৪ শতাংশ। আগে বিচার, তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ—এ রকম মত দিয়েছেন উত্তরদাতাদের দশমিক ১ শতাংশ। আর উত্তরদাতাদের মধ্যে দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, শর্তহীনভাবে অথবা বিভিন্ন শর্তে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন।
৬৯ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও দলটির জয়ের সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না তারা। জরিপে এক প্রশ্নে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করবে বিএনপি।
শর্তহীনভাবে অথবা শর্তযুক্ত অবস্থায় ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও দলটির জয়ের সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না তারা।
জরিপে এক প্রশ্নে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করবে বিএনপি। ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করবে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা।
এই জরিপ দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ২১-২৮ অক্টোবর।
গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্নীতির দায়ে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পৃথক চার মামলায় শেখ হাসিনার মোট ২৬ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গত ১২ মের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার মতোই আওয়ামী লীগের নেতাদের বেশির ভাগ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে চলে যান। তবে দলটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকে গ্রেপ্তার হন।