সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক (Meta) তার রিকমেন্ডেশন এলগোরিদম নিয়মিত আপডেট করে যাচ্ছে। ২০২৫ সালে এই এলগোরিদম আগের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এর ফলে, ব্যবহারকারীরা এখন শুধু বন্ধুদের পোস্ট নয়, বরং তাদের আগ্রহ এবং আচরণ অনুযায়ী নতুন কন্টেন্টও দেখতে পান। ফেসবুকের নতুন রিকমেন্ডেশন সিস্টেম মূলত চারটি ধাপে কাজ করে। প্রথমে সম্ভাব্য সব পোস্ট সংগ্রহ করা হয় যা ব্যবহারকারী দেখতে পারে।
এতে বন্ধুদের, গ্রুপের, পেজের এবং এমন পোস্টও অন্তর্ভুক্ত থাকে যা ব্যবহারকারী ফলো করেননি, কিন্তু আগ্রহের ভিত্তিতে রিকমেন্ড করা হয়েছে। এরপর প্রতিটি পোস্টের জন্য হাজার হাজার সিগন্যাল বিশ্লেষণ করা হয়। এই সিগন্যালের মধ্যে রয়েছে কে পোস্ট করেছে, পোস্টের ধরন যেমন ভিডিও, ছবি, লেখা বা রিলস, ব্যবহারকারীর অতীত আচরণ, পোস্টের আপলোড সময় এবং সাম্প্রতিকতা, পাশাপাশি কন্টেন্টের গুণগত মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা।
পরবর্তী ধাপে ফেসবুক অনুমান করে ব্যবহারকারী পোস্টের সাথে কীভাবে ইন্টার্যাকশন করবেন। এটি প্রেডিকশন মডেল ব্যবহার করে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বা পুরো পোস্ট পড়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে। তারপরে প্রতিটি পোস্টকে একটি রিলেভেন্স স্কোর দেওয়া হয়, এবং স্কোরের ভিত্তিতে পোস্ট ব্যবহারকারীর ফিডে উপরের দিকে প্রদর্শিত হয়। তবে ফেসবুক ফিডে বৈচিত্র্য বজায় রাখে যাতে একই ধরনের কন্টেন্ট বা সোর্স বারবার প্রদর্শিত না হয়।
২০২৫ সালের আপডেটে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ফেসবুক এখন এআই মডেল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী কন্টেন্ট রিকমেন্ড করে। শর্ট-ফর্ম ভিডিও বা রিলস দ্রুত এঙ্গেজমেন্ট তৈরি করে, তাই এগুলোর র্যাঙ্কিং অন্যান্য পোস্টের তুলনায় বেশি। Integrity এবং misinformation নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ক্লিকবেইট, মিথ্যা খবর এবং watchbait ধরনের পোস্টকে ডাউনর্যাঙ্ক করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। ব্যবহারকারীরা “Show more / Show less”, “Not interested”, এবং “Favorites” অপশন ব্যবহার করে ফিড কাস্টমাইজ করতে পারেন।
নতুন এলগোরিদম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং নিউজ পোর্টালের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। মূলকথা হলো, মূল্যবান এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করা যা শুধু লাইক নয়, শেয়ার, কমেন্ট এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ সৃষ্টিকারী। ব্যবহারকারীর আগ্রহের ভিত্তিতে কন্টেন্ট তৈরি করলে ফেসবুকের অ্যালগোরিদম এটি বেশি দেখাবে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্য, বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ কন্টেন্ট গুগলে ভালো র্যাঙ্ক করতে সাহায্য করে।
২০২৫ সালে ফেসবুকের রিকমেন্ডেশন এলগোরিদম ব্যবহারকারীর আচরণ ও এআই প্রেডিকশন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক পোস্ট দেখাচ্ছে। এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানসম্মত কন্টেন্টের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব নিউজ পোর্টাল বা ক্রিয়েটর তথ্যবহুল, শিক্ষণীয় এবং এনগেজমেন্ট সৃষ্টিকারী কন্টেন্ট তৈরি করবে, তারা ফেসবুক এবং গুগল দুই প্ল্যাটফর্মেই বেশি দর্শক পাবেন। ফেসবুকের নতুন এলগোরিদম বোঝা এবং তার সঙ্গে মানিয়ে চলা প্রতিটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
লেখক
মো: আবুল বাশার
হেড অব সোস্যাল অ্যান্ড আইটি
নাগরিক প্রতিদিন