লন্ডনে ডানপন্থি অভিবাসনবিরোধী সমাবেশে উত্তেজনা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ২৬
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৫:২৫
লন্ডনের সেন্ট্রাল এলাকায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এক বিশাল অভিবাসনবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে পদযাত্রা করেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এটি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত সবচেয়ে বড় ডানপন্থি বিক্ষোভ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডানপন্থি নেতা টমি রবিনসন উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক এই পদযাত্রায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। বিপরীতে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত পাল্টা সমাবেশ 'স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’-এ প্রায় ৫ হাজার মানুষ যোগ দেন।
সমাবেশে দেশজুড়ে মানুষ ট্রেন ও বাসে করে লন্ডনে পৌঁছান। শুরুতে এটি ‘বাকস্বাধীনতার উৎসব’ হিসেবে আখ্যায়িত হলেও দ্রুত বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যে রূপ নেয়। পুলিশের ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ উপস্থিত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তীব্র সহিংসতার শিকার হয়। পুলিশের ওপর লাথি, ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ার ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি রবিনসনসহ অন্যান্য কট্টর ডানপন্থি নেতাদের সমর্থন দেন এবং অভিযোগ করেন, ব্রিটিশ জনগণ বাকস্বাধীনতা প্রয়োগে নিরাপদ বোধ করছেন না। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের ক্ষয় দ্রুত বাড়ছে। আগে এটি ধীর প্রক্রিয়ায় হচ্ছিল, কিন্তু ব্যাপক ও নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফরাসি ডানপন্থি রাজনীতিবিদ এরিক জেমুর, যিনি দাবি করেন, ‘দক্ষিণ ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রতিস্থাপন ঘটছে। আমাদের প্রাক্তন উপনিবেশগুলো এখন আমাদেরকেই উপনিবেশে পরিণত করছে।’
বিক্ষোভকারীরা অভিবাসীদের হোটেলের বাইরেও সমাবেশ করেন। তাদের হাতে ছিল ইউনিয়ন জ্যাক, সেন্ট জর্জ ক্রস, মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা। অনেকেই ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ক্যাপ পরে ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন—‘ওদের বাড়ি ফেরত পাঠাও’।
সমাবেশে একটি গান গাওয়া হয়, যার কথায় বলা হয়, ‘পশ্চিমকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো করা হচ্ছে’। পরে মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট ও ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শিত হলে জনতা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রতিটি পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হলে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস প্রকাশ করে।
রবিনসন, যার প্রকৃত নাম স্টিফেন ইয়াক্সলে-লেনন, মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেন, ‘ব্রিটেন অবশেষে জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন কখনো শেষ হবে না।’ তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের অনিয়ম উন্মোচনকারী সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেন, যদিও তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।
সমাবেশে যোগ দেওয়া এক সমর্থক সান্ড্রা মিচেল বলেন, ‘তাদেরকে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে।’ অন্যদিকে পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন বলেন, ‘ঘৃণার ধারণা আমাদের বিভক্ত করছে। আমরা যত বেশি মানুষকে স্বাগত জানাব, দেশ হিসেবে তত শক্তিশালী হব।’
উল্লেখ্য, অভিবাসন এখন ব্রিটেনের রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু, যা দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগকেও ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন, যা রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।