প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১:৪৪:৫৪
অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি শেয়ার করা এখন অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখনো ‘মূল্যবোধ’ হিসেবে গোপনীয়তাকে কঠোর আইনের মাধ্যমে রক্ষা করা হয়। সম্প্রতি অনলাইনে এক নারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে আবুধাবির একটি আদালত এক ব্যক্তিকে ২০ হাজার দিরহাম (সাড়ে ৬ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
আবুধাবির ফ্যামিলি, সিভিল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্লেইমস কোর্ট গত বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। ওই নারীর অনুমতি ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রকাশের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই নারীর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় তিনি মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এর আগে, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আবুধাবি ক্রিমিনাল কোর্টও তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং গত মার্চে আপিল আদালত সেই রায় বহাল রাখেন। পরবর্তীকালে কোনো আপিল না হওয়ায় রায়টি চূড়ান্ত হয়।
সিভিল আদালত জানান, এই কাজটি নারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে এবং তা ‘অবৈধ’ হিসেবে গণ্য। এতে নারীর নৈতিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হতে হবে ক্ষতির মাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাদী নারী ৫০ হাজার দিরহাম দাবি করলেও আদালত বলেন, প্রমাণে আর্থিক ক্ষতি বা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক প্রভাবের তথ্য মেলেনি। তাই ২০ হাজার দিরহামকেই যথাযথ ক্ষতিপূরণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
রায়ে আদালত ফেডারেল সিভিল ট্রানজ্যাকশনস ল’র ২৮২ ধারা উদ্ধৃত করে জানান, ‘যে কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যের ক্ষতি করলে তিনি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।’
এই রায়টি আমিরাতের কঠোর গোপনীয়তা আইনের বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আদালত সতর্ক করেছে, অন্যের অনুমতি ছাড়া ছবি বা ভিডিও প্রকাশ শুধু অপরাধই নয়, তা জরিমানা ও কারাদণ্ডের কারণও হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল বা ব্লগ—সবই ‘ইলেকট্রনিক মাধ্যমের’ আওতায় পড়ে।
এক আইনজীবী জানান, একবার কিছু শেয়ার হলে তা সাইবার অপরাধে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ লাখ দিরহাম জরিমানা, কারাদণ্ড এবং প্রবাসীদের ক্ষেত্রে নির্বাসনের শাস্তিও হতে পারে।
আমিরাতের আইনে মানহানি বলতে এমন যেকোনো বক্তব্য, লেখা বা ইঙ্গিতকে বোঝায় যা কারও সম্মান বা সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ণ করে। অন্য অনেক দেশের মতো এখানে ‘সত্য’ তথ্যও মানহানিকর হতে পারে, যদি তা অন্যের অনুমতি ছাড়া প্রকাশে তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করে।