প্রকাশিত :
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৪৫:৫১
পাকিস্তানের ইতিহাসে নিজেকে ক্ষমতার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সাংবিধানিকভাবে আজীবন বিচারের ঊর্ধ্বে থাকা এই সামরিক কর্মকর্তা উপভোগ করছেন কূটনীতির সর্বোচ্চ সুবিধাও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সখ্যতা দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কে। এর মধ্যেই যেন সবচেয়ে বড় গ্যাড়াকলে পড়তে যাচ্ছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যার হ্যাঁ কিংবা না এর ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের আগামীর সম্পর্ক এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তিবাহিনীতে অংশগ্রহণের জন্য চাপ বাড়ছে আসিম মুনিরের ওপর। যার ফলে গাজার পুনর্গঠনে নিয়োজিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক বাহিনীর অন্যতম অংশ হতে চলছে পাক সেনাবাহিনী। এর মধ্যেই শীঘ্রই ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবারও ওয়াশিংটন সফর করার কথা রয়েছে পাক ফিল্ড মার্শালের। সেখানে গাজা শান্তিবাহিনী নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আসিম মুনিরের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবে রাজি হলে তা পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের গাজা শান্তি প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদল হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত রয়েছে, যা মুসলিম বিশ্বের সাধারণ নাগরিকরা সহজভাবে নেবে না। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজায় সেনা পাঠালে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের সংঘাত অনিবার্য, যা দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী ক্ষোভ আরও তীব্র করে তুলবে। এমনকি এই ক্ষোভ সংঘাতেও রূপ নিতে পারে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান জানান, গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে অংশ নিতে অস্বীকার করার বিষয়টি ট্রাম্পকে বিরক্ত করতে পারে। যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় তবে তা পাকিস্তানের জন্য মোটেও ছোট বিষয় নয়। দেশটি মার্কিন বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পের অনুগ্রহের আওতায় থাকতে আগ্রহী।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গত মাসে বলেছিলেন যে, ইসলামাবাদ শান্তিরক্ষার জন্য সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করতে পারে কিন্তু হামাসকে নিরস্ত্র করা পাকিস্তানের কাজ নয়। সেনাবাহিনীর বিবৃতি অনুসারে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিল্ড মার্শাল মুনির ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, জর্ডান, মিশর এবং কাতারের মতো দেশগুলোর সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, যা গাজা শান্তিবাহিনীর গঠনের বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, মার্কিন-সমর্থিত পরিকল্পনার আওতায় গাজায় পাকিস্তানি সেনাদের সম্পৃক্ততা পাকিস্তানের ইসলামপন্থী দলগুলোর ক্ষোভকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের তীব্র বিরোধী।