প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ৯:৩১:৪০
আখাউড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. তাকজিল খলিফা কাজলের (৫১) বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই কোটি টাকার ‘ভূতুড়ে’ আয় নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। ফলে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বাদী হয়ে মামলা করেন সংস্থাটি কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. তারিকুর রহমান।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এ মামলার নথি দাখিল করা হয়। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. মজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুল্লাহ সরকারের পক্ষে নথি আদালতে দাখিল করা হয়।
দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, তাকজিল খলিফা কাজল তিন দফায় আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি নিজের নামে ও যৌথ মালিকানায় ব্যাপক পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন, যার উৎসের বৈধতা তিনি দেখাতে পারেননি।
সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন কাজলকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি ২০২৪ সালের ১৫ মে যে বিবরণী দেন, তার সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার মোট নেট সম্পদ দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৫ টাকা। পরিবার ও অন্যান্য খাতে খরচ যুক্ত করলে তার সম্পদ-ব্যয়ের মোট পরিমাণ হয় ৩ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৫১৮ টাকা। কিন্তু বৈধ উৎস থেকে তার আয় পাওয়া যায় মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার ৬২৪ টাকা।
অর্থাৎ ২ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৪ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎস দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারেননি তিনি। এই কারণে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এজাহারে তাকজিল খলিফা কাজলের মালিকানাধীন স্থাবর সম্পদের দীর্ঘ তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আখাউড়ার রাধানগর, খড়মপুর, কালিকাপুর ও ভবানীপুর মৌজায় একের পর এক জমি ক্রয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সাফ কবলা দলিলের মাধ্যমে প্রায় ডজনখানেক বড় আকারের জমি তার নামে রেজিস্ট্রি হয়। এসব জমির রেজিস্ট্রি মূল্য মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা।
এ ছাড়া তার চারটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৪৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ হিসেবে আরও ২০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। উল্লেখ রয়েছে একটি লাইসেন্সধারী পিস্তলের কথাও।
দুদক বলছে, তদন্তকালে তার বা তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে আরও অঘোষিত সম্পদের তথ্য মিললে তা মামলায় যুক্ত করা হবে। কমিশন মামলাটি রুজু করার অনুমোদন দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র কাজলের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকজিল খলিফা কাজল আখাউড়া ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান বলে জানা গেছে।