ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় খাসমহল এলাকায়। ‘আলেম পরিবার’ হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত তারা। কোরআন-হাদিসের শিক্ষা, নৈতিকতা ও দ্বীনি আদর্শে গড়ে ওঠা এই পরিবারের প্রায় সবাই আলেম।
তার বাবা প্রয়াত মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হাদি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ওসমান হাদি সবার ছোট।
হাদির বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশাল গুঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী শরফুদ্দীন আহম্মেদ সেন্টু প্রতিষ্ঠিত জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। তার মেঝো ভাই মাওলানা ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসা করেন।
ওসমান হাদীর তিন বোনের মধ্যে বড় বোনের স্বামী নলছিটি ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও বাইপাস সড়কে আশ্রাফ আলী হাওলাদার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আমির হোসেন। মেঝো বোনের স্বামী মাওলানা আমিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন এবং ছোট বোনের স্বামী নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক মাওলানা মনির হোসেন।
ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু। পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি অনেকের কাছে বিশেষ পরিচিতি পান। এরপর টকশো ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেওয়া ঝাঁজাল বক্তব্যে তিনি অনেকের কাছে হয়ে ওঠেন অনন্য এক সাহসী মুখের প্রতিচ্ছবি।
জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি এক সময় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। পরে কোচিং সেন্টার সাইফুর’স-সহ বিভিন্ন কোচিংয়ে শিক্ষকতাও করেন। সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওসমান হাদি শিক্ষকতা করছিলেন। তিনি বরিশালের রহমতপুরে বিয়ে করেন। তার এক বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
নলছিটির পৌর শহরের বাসিন্দা শাহাদাত আলম ফকির বলেন, হাদি আমাদের নলছিটি সন্তান। ৫ আগস্টের পর থেকে ও দেশের জন্য লড়াই শুরু করেছিলো ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছিলো। ও সব দুর্নীতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলেছেন। ওর উপর হামলা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
হাদির প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাদি ভাইর পরিবারের সবাই আলেম। তার বাবা একজন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। ইসলামি শিক্ষাই তাদের জীবনের মূল পথনির্দেশক। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা এবং সমাজে ন্যায়, সততা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাই তাদের মূল লক্ষ্য।
হাদির বোন মাসুমা বেগম বলেন, এ দেশে দেশপ্রেমিক মানুষ থাকবে না, ভারত ওরে বাঁচতে দিবে না। ও ভারতবিরোধী লেখা লেখে, বাংলাদেশপন্থি লেখা লেখে। ওর প্রত্যেকটা শিরা-উপশিরা দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিবে। এ দেশে ভারতের হাজার হাজার ‘র’ আছে, আওয়ামী লীগ আছে, শত্রুর অভাব নাই। এ দেশে জিয়াউর রহমানকেও বাঁচতে দেয়নি।
হাদির বোন জামাই মনির হোসেন বলেন, ওসমান হাদি এমন একজন ব্যক্তি যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণটা দেশপ্রেম। ও শাহবাগের মোড়ে যা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও একই বলে।
বাংলাদেশে স্বচ্ছ মানুষের রাজনীতি ‘কেউ গ্রহণ করে না’, তাদের এমন মন্তব্যে হাদি নিরুৎসাহিত হতেন তুলে ধরে তিনি বলেন, ও বলতো কারো না করো শুরু করতে হবে, সেই থেকে শুরু করা। আমরা জানতাম এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। সে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে বলতো। হাদি বলতো, ‘আমি শুরু করবো, আমি হয়তো থাকবো না, আমার দেখাদেখি হাজার হাজার হাদির জন্ম হবে।’
ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন হাদি। এখানে রয়েছে তার অসংখ্য স্মৃতি। ছাত্রজীবন থেকে ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। সুবক্তার পাশাপাশি অন্যায়েয় বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুইজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিলো।
আজ (সোমবার) দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অসপ্রে এভিয়েশনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হাদিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রওনা করেন।