প্রকাশিত :
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:১২:৫৯
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় সুজন মন্ডল নামের এক মাইক্রোবাস চালকের রশিতে ঝুলানো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে রাতভর টাকা চুরির দায়ে আটকে রাখা হয়েছিলো।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল এগারোটায় উপজেলার কাশিড়া বাজারে গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত সুজন মন্ডল উপজেলার কাশিড়া পুকুরিয়া গ্রামের মো. ওসমান মন্ডলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও চুরির অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, সুজনের মাথায় বান্ডেজ ও পশ্চাৎদেশে কালশিটে দাগ পাওয়া গেছে। সুজন মন্ডলকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতের স্ত্রীর দাবি, ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন তার স্বামীকে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। ঘটনাটি ধামাপাচা দিতে নিহতের গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সুজন মন্ডল তার খালাতো বোন সোনাভানের বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে আসে। সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের সহায়তায় সুজন মন্ডলকে ধরে আনা হয়। সেখানে বেধড়ক মারপিটের একপর্যায়ে সুজন মন্ডল টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন।
তিনি চুরি করা টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার ফেরত দেন। এরপর ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন সেখান থেকে সুজনকে সঙ্গে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। এরপর সেলিম ও তার সহযোগীরা আবারও সুজন মন্ডলকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে সুজন মন্ডল গুরুত্বর আহত হলে স্থানীয় ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দেয়।
সেলিম হোসেন দুই জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে রাতে সুজন মন্ডলকে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার সকালে সুজন মন্ডল তার স্ত্রী মারুফা আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। পরে পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশেরা সুজন মন্ডলের আত্মহত্যার খবর দেন।
সুজনের স্ত্রী মারুফা আকতার বলেন, টাকা চুরির অভিযোগে বুধবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আমার স্বামীকে ডেকে এনে রাতভর বেধড়ক লাঠিপেটা করে। ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীদের নির্যাতনে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি আড়াল করতে আমার স্বামীর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।
নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, সুজন মন্ডল টাকা চুরি করেছিল। তাকে আমার কার্যালয়ে এনে রাত দশটার পর থানায় খবর দিয়েছিলাম। পরে রাতে দুই জন গ্রাম পুলিশের পাহারায় রেখে বাড়িতে চলে এসেছি। দুই জন গ্রাম পুলিশ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে সুজন আত্নহত্যা করে।
সুজনের স্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুজনকে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে একজনকে আটকে রেখেছেন সেটি আমাকে জানানো হয়নি। ইউপি সদস্য এভাবে কাউকে আটকে রাখতে পারেন না।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন রেজা বলেন, ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মন্ডলের ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার মাথায় বান্ডেজ ও পশ্চাৎদেশে কালশিটে দাগ রয়েছে। সুজন মন্ডলকে মারধর করাস হয়েছে।