প্রকাশিত :
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৫৯:১৮
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় একটি গভীর নলকূপের কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে অন্তত ১০০ বিঘা জমিতে আলু, রবিশস্য, বোরো ধানের বীজতলা ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার শতাধিক প্রান্তিক কৃষক।
উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কাদোয়া বিষ্ণপুর গ্রামে অংশীদারদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে দুই মাস ধরে এই সেচ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে ১১০ বিঘা জমি নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জমির সেচের জন্য গ্রামটিতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে গভীর নলকূপটি গ্রামের কৃষকদের সেচের প্রধান উৎস ছিল। দুই মাস আগে হঠাৎ করে নলকূপটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বিকল হয়ে পড়ে। বিষয়টি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা যাচাই করে ওই স্থানে নতুন করে বোরিং (খনন) করার পরামর্শ দেন।
এই সুযোগে নলকূপের জমির মালিকানা ও পরিচালনা নিয়ে অংশীদারদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে নতুন বোরিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প।
বিরোধের জের ধরে আবুল খায়ের নামের এক অংশীদার স্কীমের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নতুন বোরিং স্থগিত চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় নতুন বোরিং কার্যক্রম। এ ঘটনায় দুই মাস জমিতে পর্যাপ্ত সেচ না পাওয়ায় অনেক জমিতে ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার বীজতলাই নষ্ট হয়ে গেছে।
আবু হাসান নামের ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, নলকূপ নষ্ট হওয়ার পর অংশীদারদের দ্বন্দ্বে দুই মাস ধরে সেচ বন্ধ। ফসল বাঁচাতে শ্যালো মেশিন দিয়ে দূরের পুকুর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। যেখানে নলকূপের পানি বিঘাপ্রতি ২০০ টাকা, সেখানে এখন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তবুও সময়মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমার আলু, রবিশস্য ও বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আব্দুল আজিজ নামের আরেক কৃষক জানান, এই মৌসুমে রসুন, পেয়াজ, আলু ও গম চাষ করেছিলাম। গভীর নলকূপ হঠাৎ বন্ধ হওয়ার পর মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে বিগত দুই মাস সেচ বন্ধ রয়েছে। এতে আমার প্রায় সব গুলো ফসল নষ্ট হয়েছে।
ওই গভীর নলকূপ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অপরেটর আবু সাঈদ জানান, দুই মাস আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ করে গভীর নলকূপটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা এখানেই নতুন করে খনন করতে বলেন। সে অনুযায়ী আমরা দ্রুত নতুন খনন করার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
পরে এক অংশীদার আবুল খায়ের অনিয়মের অভিযোগে নতুন করে খনন করতে বাধা দেন। পরে সে খনন বন্ধ করতে আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ কারণে দুই মাস ধরে জমি গুলোতে আমরা সেচ দিতে পারিনি। কৃষকদের বাঁচাতে যে ভাবেই হোক নতুন খনন করে আমরা সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করবো বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে অংশীদার আবুল খায়ের অভিযোগ করে বলেন, আমি সেচ বন্ধের পক্ষে নই। দীর্ঘদিন ধরে নলকূপ পরিচালনায় অনিয়ম হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের পানি দেওয়া হতো, যার সঠিক হিসাব কখনোই দেওয়া হয়নি। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।
আক্কেলপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা মনসুর আলী নাগরিক প্রতিদিনকে জানান, নলকূপের জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা অংশীদারদের নিজেদের বসে সমস্যার সমাধান করতে বলেছি। এ ছাড়া আগের বোরিংয়ের প্রচুর পাথর থাকায় সেখানে কাজ করা যাচ্ছিল না। কৃষকদের ফসলের কথা বিবেচনা করে পাশের জমিতে নতুন করে বোরিং শুরু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।