ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা ঘাটতির চিত্র উন্মোচন, প্রশ্ন উঠছে
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১:১৯:৩৫
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা ঘাটতির চিত্র উন্মোচন, প্রশ্ন উঠছে পর্যটন নীতিমালা নিয়ে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি | টাঙ্গুয়ার হাওর
দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর এবার পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠল আতঙ্কের নাম। শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ একটি হাউজবোটে আগুন লেগে মুহূর্তেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বোটে থাকা ১২ পর্যটক কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু এই ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠছে এই সুন্দর হাওরে পর্যটকদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?
ঘটনার ধরণ ও প্রাথমিক তদন্ত: ঘটনাটি ঘটে টেকেরঘাট এলাকায়, দুপুর দেড়টার দিকে। 'নদীর সাথী' নামক হাউজবোটটিতে ১২ জন পর্যটক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ৭ জন নারী। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে লিকেজ হয়ে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। যান্ত্রিক কক্ষেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বোটে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না, এমনকি পর্যটকদের প্রাথমিকভাবে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনাও ছিল না।
পর্যটকের অভিজ্ঞতা:ঢাকা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন বলেন:“প্রথমে ধোঁয়া দেখি, এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আগুন। একজন বন্ধুকে পানি দিয়ে ঢেলে দিই, তারপর সবাই লাফ দিয়ে নেমে পড়ি। আমরা মরতে মরতে বেঁচেছি।”
স্থানীয় নৌকার মাঝি কুদরত আলী বলেন:“বোটে যদি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকত, আগুন এতো ছড়াত না। আমরা স্থানীয়রা গিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন কমাই।”
প্রশাসনের ভূমিকা ও তদন্ত:সুনামগঞ্জের ডিসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন:“তদন্ত চলছে। আমরা হাউজবোটগুলোর নিরাপত্তা যাচাই করব। প্রয়োজন হলে নতুন নিয়ম জারি করা হবে।”
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানায়, হাওর এলাকায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এমনকি কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালাও স্থানীয় বোটের মালিকদের বাধ্যতামূলক নয়।
বিশ্লেষণ: কেবল দুর্ঘটনা, নাকি ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা?
টাঙ্গুয়ার হাওর প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক টানে। কিন্তু পর্যটন নীতিমালা, লাইসেন্সিং, ফায়ার সেফটি, গাইডলাইন এসব একেবারেই নামমাত্র। সরকার এই এলাকাকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করলেও বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ হাউজবোট চলে অবৈধভাবে বা অপ্রশিক্ষিত নৌযাত্রীদের ওপর নির্ভর করে। যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে, সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা বাধ্যতামূলক এটা দেশের প্রচলিত আইন। কিন্তু হাওরে সে আইন যেন শুধু কাগজেই।
এই অগ্নিকাণ্ড শুধুই একটা ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’ নয় এটা বড় ধরনের ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন ও করণীয়: এই ঘটনার পর শুধু তদন্তে ক্ষান্ত দিলে হবে না। জরুরি ভিত্তিতে হাওরের সব হাউজবোট লাইসেন্স যাচাই, নিরাপত্তা গাইডলাইন তৈরি, স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ এবং পর্যটকদের জন্য জরুরি নির্দেশিকা জারি করা দরকার।
হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে যেন কেউ প্রাণ না হারায়, সেই নিশ্চয়তা এখন সময়ের দাবি।