বিজ্ঞানভীতিতে ছেলেরা, এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা!
প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২৫, ১:০৮:৩০
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে: জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি একদিকে যেমন আশার আলো, তেমনি ছেলেদের দুর্বলতা উদ্বেগজনক। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় মেয়েদের উপস্থিতি ৫২% যার মধ্যে ৩২% ছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে, ছেলেদের মধ্যে এই সংখ্যা ৪৮%, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০% কম।এই প্রবণতা বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পরিসংখ্যান, ইনফরমেটিক্স এবং মেটা-বায়োটেকনোলজির মতো বিজ্ঞানভিত্তিক বিভাগগুলোর প্রতি মেয়েদের প্রবল আগ্রহকে নির্দেশ করে।
শিক্ষাবিদদের উদ্বেগ
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একাডেমিক বিশ্লেষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. সুমি খান বলেন, “এটা বাস্তব যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক সময় ছেলেদের জন্য বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। ছোট বয়স থেকেই ছেলেরা বেশি ক্রীড়া এবং শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে যায়, কিন্তু বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক শিক্ষা তাদের জন্য অনেক সময় ‘বোরিং’ বা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু এখন মেয়েরা এই বাধা অতিক্রম করে আরো ভালো করতে শুরু করেছে।” তিনি আরও বলেন, “বিশেষভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে একদিকে মেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে যে তারা সমানভাবে সক্ষম, তবে ছেলেরা পিছিয়ে যাচ্ছে এটি সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিণতির বিষয়।”
শিক্ষাব্যবস্থায় ‘স্মার্ট’ মেয়ে, ‘প্যাসিভ’ ছেলে
২০২৫ শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে, যেখানে মেয়েরা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে না, বরং প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করছে। তাছাড়া, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় ‘স্মার্ট লার্নিং’ ও ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ’ পদ্ধতির ফলে মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি সুযোগ পাচ্ছে সৃজনশীলতা এবং যুক্তিভিত্তিক চিন্তা করার।একটি জাতীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৫ সালে ডিজিটাল শিক্ষা ও অনলাইন ক্লাসে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ২৫% বেশি সময় ব্যয় করছে। এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি তাদের আগ্রহ এবং ক্ষমতার বৃদ্ধির প্রতিফলন।
প্রযুক্তি শিক্ষা ও উদ্ভাবন
বর্তমানে মেয়েরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। এখন স্কুলগুলোতে "ডিজিটাল ল্যাব" এবং "ভার্চুয়াল রিয়ালিটি" ব্যবহার হচ্ছে, যা মেয়েদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা গড়ে তুলছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শাহিদা আক্তার বলেন,
“এখন মেয়েরা শুধু পড়াশোনা করছে না, তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গেইম, কোডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনাতেও দক্ষ হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তন প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য একটি বড় সুযোগ।”
ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
যদিও মেয়েরা জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রেও অগ্রসর হচ্ছে, তবুও ছেলেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাধিক কারণ রয়েছে। অনেক ছেলে পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বা সৃজনশীলতায় পটু না হয়ে শারীরিক বা বাহ্যিক কার্যকলাপের প্রতি ঝুঁকছে। এমনকি পরিবার বা স্কুল থেকেও তারা কখনো সঠিক পরামর্শ ও উৎসাহ পাচ্ছে না।
মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি
তবে ইতিবাচক দিক হল, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া এখন আরো দৃঢ়। এখন পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণায় সাফল্য অর্জন করছে। ফলে অনেক পরিবার এখন নিজেদের মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা সমাজে বড় পরিবর্তন আনছে।
শিক্ষায় সমতা ও ভবিষ্যতের সূচনা
২০২৫ সালের শিক্ষাব্যবস্থায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বিজ্ঞান শাখায় বাড়তি আগ্রহ এখন স্পষ্ট। মেয়েরা এখন একদিকে যেমন পরিসংখ্যান, বিজ্ঞান, গণিত ও প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ করছে, অন্যদিকে তাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা এবং সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের উন্নতির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।তবে ছেলেদের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা পিছিয়ে না পড়ে। ২০২৫ সালের শিক্ষাব্যবস্থা এমন এক যুগের শুরু, যেখানে সমতা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অংশগ্রহণ বাড়বে।