প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২৫, ২:১০:৫৮
জীবনের কঠিন সময়গুলো আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। যখন সামনে কোনো পথই দেখা যায় না, তখনই কেউ কেউ এগিয়ে যেতে সাহস পান, আর সেই পথেই পাওয়া যায় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এমনই এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প আমাদের সামনে এসেছে, যেখানে একজন ছাত্র এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পরও নিরলস পরিশ্রম এবং দৃঢ় মনোবল দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। আজকের গল্পটি এমন এক ছাত্রের, যিনি পরাজয়কে পরাভূত করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন।
ফেল করার পরও থামেননি
এসএসসি পরীক্ষায় ফেল হওয়া মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়, এমনটাই প্রমাণ করেছেন মাহমুদুল হাসান। স্কুল জীবনে খুব ভালো ছাত্র হলেও এসএসসি পরীক্ষায় তার আশানুরূপ ফল হয়নি। ফেল করার পর তার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই ভেঙে গিয়েছিল। তবে, এই অভিজ্ঞতাকে তিনি নিজের জন্য একটি শক্তিশালী শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। মাহমুদুল বলেন, “ফেল হওয়ার পর আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম, জীবন শুধুই পরীক্ষা নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া। আমি ঠিক করলাম, জীবনের বড় পরীক্ষাটি আমাকে জিততেই হবে।”এটাই তার জীবনযুদ্ধের শুরু।
দৃঢ় মনোবল এবং পরিশ্রম: প্রথম পদক্ষেপ
এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মাহমুদুল একেবারে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি। বরং, তিনি নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের পড়াশোনা পুনরায় পরিকল্পনা করেন এবং জীবনের লক্ষ্য স্থির করেন বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। তিনি জানতেন, এ ক্ষেত্রে তাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে, কেবল পড়াশোনায় নয়, তার মানসিকতা এবং দক্ষতাতেও পরিবর্তন আনতে হবে।এরপর তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে নিজের পড়াশোনা শুরু করেন। কখনও দেরি না করে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে কঠোর পরিশ্রমে যুক্ত হন। সামাজিক জীবনেও অনেক পরিবর্তন আনেন। সেলফ-ডিসিপ্লিন এবং স্ব-অনুপ্রেরণায় ভরা তার যাত্রা ছিল কঠিন, কিন্তু কখনোই তিনি থেমে যাননি।
বিসিএস প্রস্তুতির পথে বাধা ও চ্যালেঞ্জ
মাহমুদুল বলেন, “বিসিএস প্রস্তুতির পথও সহজ ছিল না। শুরুতে অনেক বাধা ছিল পড়ে যাওয়ার ভয়, প্রতিযোগিতা, আর্থিক সংকট। তবে আমি জানতাম, এই পথেই সফলতা আছে। একটানা পড়াশোনার পাশাপাশি, আমি সৃজনশীলতা, একাগ্রতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।” তিনি জানতেন, বিসিএস প্রস্তুতির জন্য শুধু বই পড়া বা প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করা যথেষ্ট নয়। তাই, তার প্রস্তুতির অন্যতম অংশ ছিল দেশের ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানা এবং বিশ্লেষণ করা। তিনি প্রতিদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধৈর্য এবং মনোবল দিয়ে প্রস্তুতি চালিয়ে যান।
সফলতার চূড়ায় পৌঁছানো
প্রতিটি মোমেন্ট যখন তার পথচলায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছিল, তখনই মাহমুদুল নিজেকে নতুন করে উজ্জীবিত করতেন। অনেক সময় হতাশা তাকে ঘিরে ধরেছিল, কিন্তু তিনি জানতেন, জীবন কোনো গতি অনুসরণ করে না, বরং নিজের গন্তব্য তৈরি করতে হয়।এরপর, সেই পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়েই সফলতার পথ খুলে গেল। বিসিএস পরীক্ষায় সে সাফল্য অর্জন করল এবং একটি সরকারি চাকরিতে ক্যাডার পদে নির্বাচন পেয়ে বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হলেন। আজ তিনি দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন, এবং তার এই যাত্রা যুব সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবন্ধকতাকে জয়
মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম, সাফল্য শুধুমাত্র কষ্ট ও পরিশ্রমের ফল নয়, এটা তার উপর বিশ্বাসেরও ফল। আপনার যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে কোনো কিছুই আপনাকে থামাতে পারে না।” মাহমুদুলের এই যাত্রা সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় কোনো মানুষকে তার ব্যর্থতার কারণে বিচার করা উচিত নয়। যাদের সফলতার পথে যাত্রা শুরু হয়নি, তাদের জন্য এটি একটি উদাহরণ যে, চেষ্টা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে যে কেউ জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে পারে।
শিক্ষা, পরিশ্রম ও সাহস
আজ, যখন মাহমুদুল হাসান তার ক্যাডার জীবন নিয়ে কাজ করছেন, তখন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং নিরলস পরিশ্রম। তার মতে, যদি কোনো মানুষ নিজের লক্ষ্য স্থির করে, তবে কোনো পরিস্থিতিই তাকে থামাতে পারে না। তিনি পরামর্শ দেন, “একটি সফল জীবন গড়তে হলে কখনোই দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সাহসী হতে হবে, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমে ভরপুর থাকতে হবে।”
বাধা না মেনে সামনে এগিয়ে চলা
এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মাহমুদুল হাসান যেভাবে বিসিএস ক্যাডার হয়ে সফল হয়েছেন, তা শুধু তার নিজের জন্যই নয়, সারা সমাজের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা। এই গল্পটি সকলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা: কোনো বাধাই শেষ নয়, যদি আমাদের ভিতরে প্রচুর সাহস এবং দৃঢ়তা থাকে।আজকের যুবকদের জন্য এই যাত্রা একটি উদাহরণ, যেখানে তারা শিখতে পারে বাধা আসবে, তবে সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে। এবং শেষ পর্যন্ত, সফলতা তাদের হাতেই থাকবে।