প্রকাশিত :
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯:৩১
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) বাংলাদেশের বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষায় দেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এদেশের টেক্সটাইল শিল্পের অগ্রগতি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পেছনে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে। দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণাগার, নীতি-নির্ধারণ থেকে উদ্ভাবন—সব জায়গাতেই বুটেক্সিয়ানরা আপন আলোয় উজ্জ্বল।
উচ্চমাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীরা বুটেক্সে চার বছর মেয়াদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বি.এস.সি ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। অন্যান্য পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল বিষয়ক সাবজেক্ট পড়ানো হলেও একমাত্র বুটেক্সেই টেক্সটাইল ভিত্তিক ১১টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে স্পেশালাইজড হওয়ারও সুযোগ রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের টেক্সটাইল সেক্টরে বিশেষভাবে এগিয়ে থাকতে সহায়তা করে আর তাই উচ্চমাধ্যমিকের পর যারা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংকে স্বপ্নের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়, তাদের কাছে বুটেক্স মানে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়; একটি স্বপ্ন, একটি পরিচয়, একটি ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।
আগামী ৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১১ ডিসেম্বর। এরই ধারাবাহিকতায় বুটেক্স ও টেক্সটাইল খাত এবং ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী অন্বয় দেবনাথ, কাজী ওয়াসিমা তাসনিম, বায়েজিদ আহম্মেদ এবং নাজরানা মেহনাজ দিবা।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্বয় দেবনাথ বলেন, বুটেক্সে উন্নতমানের ল্যাব, মেশিনারিজ থাকার পাশাপাশি প্রত্যেক সেমিস্টারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট এবং শেষ সেমিস্টারে সরাসরি ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। এছাড়া খেলাধুলা, ডিবেট, সাংস্কৃতিক চর্চাসহ সহ-শিক্ষাকার্যক্রমের জন্য আছে বিভিন্ন ক্লাব। যা শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং ফ্যাক্টরি সম্পর্কে শিক্ষা জীবনেই ধারণা নিতে সাহায্য করে।
বুটেক্সের রয়েছে শক্তিশালী এলামনাই কমিউনিটি৷ দেশের কম বেশি বড় বড় সব টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতেই জিএম, এজিএম, ম্যানেজারসহ উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বে আছেন তারা৷
বুটেক্স থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুযোগ থাকে টেক্সটাইল সেক্টরে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার। ডায়িং, ওয়াশিং, প্রোডাকশন, মার্চেন্ডাইজিং এন্ড মার্কেটিং, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টসহ প্রায় সব সেক্টরেই ক্যারিয়ার গড়া যায় বুটেক্সের যেকোনো সাবজেক্ট থেকে। পাশাপাশি রয়েছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি যেমন: ইউনিক্লো, ডিক্যাথলোন, নেক্সট সোর্সিং এর মত কোম্পানিগুলোর লিয়াসন অফিসে কাজ করার সুযোগ৷ এছাড়াও বুটেক্স থেকে পড়ে অনেকেই বিসিএস কিংবা ব্যাংক জবের মতো সরকারি চাকরিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন৷ পাশাপাশি আমেরিকা, চীন, জার্মানিসহ ইউরোপের আরো বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তো আছেই৷
টেক্সটাইলে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকলে বুটেক্স হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভালো চয়েজ।
একই ব্যাচের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ওয়াসিমা তাসনিম বলেন, টেক্সটাইল আজ একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল, প্রযুক্তিনির্ভর, উদ্ভাবনমুখী সেক্টর। প্রতিনিয়ত বাড়ছে নতুন মিল, গার্মেন্টস, রিসার্চ ইউনিট এবং সাসটেইনেবল টেক্সটাইলের চাহিদা। রিসাইক্লিং, ফাইবার ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিমার সায়েন্স, টেক্সটাইল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট টেক্সটাইলের মতো নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ফলে এই সেক্টরে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনও বাড়ছে—যার বড় একটি অংশ তৈরি করে বুটেক্স। দেশের অন্যতম টেক্সটাইল বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানকার ডিগ্রি টেক্সটাইল শিল্পখাতে সরাসরি গ্রহণযোগ্য।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও বুটেক্সিয়ানদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত—জার্মানি, ইউরোপ, আমেরিকা, চায়না ও অন্যান্য দেশে তাদের উপস্থিতি বিশাল। এছাড়া বুটেক্স থেকে বের হয়ে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন।
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহম্মেদ বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বুটেক্সের সবচেয়ে বড় স্বাতন্ত্র্য হলো—এখানে পড়লে একজন শিক্ষার্থী নিজের বিষয়সম্পর্কিত চাকরিতে যুক্ত হওয়ার বাস্তব সুযোগ প্রায় নিশ্চিতভাবেই পায়। বুটেক্স ছোট ক্যাম্পাস হওয়ায় সিনিয়র–জুনিয়রদের মধ্যে সম্পর্ক খুব দ্রুত তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গঠনে অসাধারণ সহায়তা করে। যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১০–২০% নিজের বিষয়ের চাকরি পায়, সেখানে বুটেক্সের ৯০–৯৫% শিক্ষার্থী চাইলে পড়াশোনা শেষ করেই সরাসরি ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিতে পারে। এই নিশ্চিত ক্যারিয়ারই বুটেক্সকে এক অনন্য উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছে।
একই ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজরানা মেহনাজ দিবা বলেন, স্কিল থাকলে টেক্সটাইল সেক্টরে গ্রোথ খুব দ্রুত হয়। বুটেক্সিয়ানরা ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি দেশের বাইরেও উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন, আমাদের অনেক সিনিয়র বাইরের ভার্সিটিগুলোতে শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করছেন।
ভর্তি প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো করে নেওয়া হলে বুটেক্সের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়ার প্রয়োজন হয়না। বুটেক্সের প্রশ্ন যথেষ্ট স্ট্যান্ডার্ড হয়ে থাকে। তা-ই কিছু বিষয় যেমন: বিগত বছরের প্রশ্ন দেখা এবং সেই সঙ্গে জরুরি টপিকগুলোতে জোর দেওয়া হলে বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা সহজ হয়ে যায়। অনুজ যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছো বুটেক্সে, তোমাদের জন্য শুভকামনা রইলো। বুটেক্সে হতে পারে তোমার জীবনের সেরা একটি জার্নি।