লোকসংগীতের আত্মা, লালনের দর্শন আর মাটির টানে যিনি সারা জীবন ভরিয়ে রেখেছিলেন শ্রোতার মন, সেই ফরিদা পারভিন আজ নেই।
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২১:০৩
ফরিদা পারভিন জন্মেছিলেন কুষ্টিয়ায়, লালনের গানে গড়ে উঠেছিলেন। তাঁর কণ্ঠে লালন যেন হয়ে উঠেছিল নতুন করে ধ্বনিত যা তরুণ থেকে বৃদ্ধ, শহর থেকে গ্রাম, সবার হৃদয় স্পর্শ করেছে। একসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেও, লালনের গান তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব। ফরিদা পারভিনের সাফল্য কেবল দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না। লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও থেকে প্যারিস বিশ্বের মঞ্চে তিনি শোনালেন বাংলার মাটির গান। ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম তাঁকে বলেছিল “Voice of Baul”। তাঁর গাওয়া “খাঁচার ভেতর অচিন পাখি” কিংবা “নামাজ রোজা হজ কোরবানি” আজও বাংলা গানপ্রেমীদের হৃদয়ে বেঁচে আছে। সংগীতজ্ঞ ড. লুৎফর রহমান বলেন, “ফারিদা পারভিন শুধু গায়িকা ছিলেন না, তিনি ছিলেন সংস্কৃতির এক জীবন্ত পাঠশালা। তাঁর কণ্ঠে লালনের গান শুনলে মনে হতো দর্শনও যেন সহজ হয়ে যায়।” আন্তর্জাতিক সংগীত সমালোচকরা তাঁকে তুলনা করেছেন পাকিস্তানের আবিদা পারভিন বা ভারতের কিশোরী আমোনকরদের সঙ্গে। তাঁদের মতোই ফারিদা পারভিনও মঞ্চে শুধু গান গাইতেন না, দর্শককে নিয়ে যেতেন অন্য এক জগতে।
বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তবে তাঁর আসল স্বীকৃতি এসেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। যে মানুষ ভাটির গান বোঝেন না, তাঁরাও ফরিদার গানে পেয়েছেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর গান যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”। এই দার্শনিক বাণীই ছিল তাঁর জীবনের মর্মকথা।
“ফরিদা পারভিন শুধু গায়িকা নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত দর্শন যা বাংলার সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছে।”
এখন প্রশ্ন নতুন প্রজন্ম কি এই ঐতিহ্য বহন করবে? সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফরিদার রেখে যাওয়া ভাণ্ডারই হবে তরুণদের প্রেরণা। বিশ্বায়নের ভিড়ে লোকসংগীতের টিকে থাকার যে সংগ্রাম, সেখানে ফরিদা পারভিন চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
ফরিদা পারভিন চলে গেলেন, কিন্তু তাঁর কণ্ঠ এখনো বেজে ওঠে ইউটিউবে, টেলিভিশনে, কিংবা স্মৃতির ভাঁজে। তিনি নেই-তবু তাঁর গান আছেই। সেটাই হয়তো শিল্পীর সত্যিকারের জয়।