ভাঙছে বাঁধ, ডুবে যাচ্ছে বাড়িঘর, শঙ্কায় কৃষক ও সাধারণ মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই কি বারবার এই বিপর্যয়?
পানির চেয়ে বেশি ভয় এখন ‘অবিশ্বাস’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাসিন্দা হেলাল মিয়া ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, “প্রতিবারই বন্যা আসে, প্রতিবারই বাঁধ ভাঙে। ঠিক করার আশ্বাস থাকে, কাজ থাকে না!” বাঁধগুলো মূলত অস্থায়ী, বর্ষা শুরুর আগেই সংস্কারের কথা থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ বাঁধই থাকে দুর্বল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও তদারকির অভাবই দায়ী।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর রূঢ়তা
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীপথ ও বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। নেপালে অতিবৃষ্টির ফলে পানি নামছে সরাসরি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বাংলাদেশের বন্যা এখন আর শুধু জাতীয় সংকট নয় এটি একটি আঞ্চলিক জলবায়ু বিপর্যয়। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ জলবায়ু-প্রভাবিত শরণার্থী হয়ে উঠতে পারে।
“বাঁধ ভাঙে শুধু পানি দিয়ে নয়, ভাঙে দায়িত্বহীনতা দিয়েও।”—ড. ফেরদৌস নাজমা, পরিবেশ বিজ্ঞানী
নতুন করে ভাবতে হবে বাঁধ ব্যবস্থাপনা
জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম বলেন, “আমাদের বাঁধ পরিকল্পনায় এখনো পুরনো মানচিত্র, পুরনো গতি। অথচ নদী-পাহাড়-জলপ্রবাহের চেহারা বদলে গেছে আগেই। এভাবে বাঁধ টিকবে না।” বাঁধ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, স্থানীয় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়হীনতা এই দুই-তিনটি বিষয় মিলেই প্রতিবছর একই পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে লাখো মানুষকে।
প্রতিক্রিয়া ও ত্রাণ তৎপরতা
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ইতোমধ্যে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ত্রাণের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। বিশেষত নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের ধান-সবজি তলিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
পিছিয়ে যাচ্ছে প্রগতি
প্রতি বছর বন্যা শুধু ধ্বংস নয়, প্রবৃদ্ধির গতি রুদ্ধ করার অন্যতম কারণ। ফসলের ক্ষতি, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়া, স্কুল-কলেজে পাঠদান বন্ধ হওয়া সবকিছু মিলে সামাজিক কাঠামোতে এক অস্থিরতা তৈরি করে।
শেষ কথা
বাঁধ ভাঙার গল্প শুধু পানি প্রবেশের নয়, এটি রাষ্ট্রের দায়ভারের ভাঙনও। যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আগামী বছরগুলোয় আমরা শুধু বন্যা নয় জীবনযাত্রার এক ভয়ানক পতন প্রত্যক্ষ করবো।