প্রকাশিত :
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫০:২৫
আওয়ামী লীগের শাসনামলে টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এই মামলার মোট আসামি ১৭ জন। এই ১৭ আসামির মধ্যে বর্তমানে কর্মরত ১০ জন সেনা কর্মকর্তাও আছেন, যারা অপরাধ সংঘটনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) ছিলেন।
গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জন আসামি রয়েছেন। পলাতক অন্য আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
এর মধ্যে তোফায়েল, কামরুল ও মশিউর জুয়েলের পক্ষে শুনানির আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি আদেশের জন্য আরও একটি তারিখ নির্ধারণের আর্জি জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল দুদিন পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করেন। তবে আসামিপক্ষের এ আবেদনে আপত্তি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিচারকাজ বিলম্বিত করতেই আসামিদের আইনজীবীরা এ ধরনের আবেদন করছেন এবং আদালতকে বিব্রত করতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন তাবারক হোসেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শুনানিতে প্রত্যেক আইনজীবীই পৃথক পৃথক গ্রাউন্ড উপস্থাপন করে তাদের মক্কেলের অব্যাহতি প্রার্থনা করেন। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরুর আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি টিএফআই সেলের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন এবং বলেন, গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একটি নতুন বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য সাধারণত দুইভাবে নির্ধারিত হতো—ভাগ্য ভালো হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো, আর অন্য ক্ষেত্রে সাত-আট বছর গুমে রাখার পর অজ্ঞাত কোনো স্থানে ফেলে দেওয়া হতো।
চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় আদালত তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন। এর আগে, ৮ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
উল্লেখ্য, গুমের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন আইন করেছে। গত ২ ডিসেম্বর গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়।