প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৯:২৯:১০
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মাধ্যমে আদালত ‘ক্ষমতা যাই হোক না কেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’— মৌলিক বার্তা আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বিবৃতিতে বলেন, আজ বাংলাদেশের আদালত এমন এক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে, যা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিধ্বনিত হবে। ক্ষমতা যা-ই হোক না কেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এই মৌলিক নীতিকে আজকের রায় আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের বিদ্রোহে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের জন্য এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তা পূর্ণ ন্যায়বিচার নয়। যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের দীর্ঘদিনের বেদনা ও দাবি আজ নতুন করে স্বীকৃতি পেল।
তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যখন বছরের পর বছর ধরে চলা দমন-পীড়নে বিধ্বস্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। যে অপরাধের বিচার হয়েছে (অস্ত্রহীন তরুণ-তরুণী ও শিশুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ) তা শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যকার মৌলিক সম্পর্ককেও পদদলিত করেছিল। এসব ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মূল মূল্যবোধ (মর্যাদা, ধৈর্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার) গভীরভাবে আঘাত করেছিল।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জীবন হারিয়ে গেছে। তারা শুধু সংখ্যা ছিল না, তারা ছিল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অধিকারসম্পন্ন সাধারণ নাগরিক। মাসের পর মাস সাক্ষ্যে উঠে এসেছে কীভাবে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর, এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল। আজকের রায় সেই কষ্টকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে, আমাদের বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির মূলধারার সঙ্গে নিজেকে আবারও যুক্ত করছে। পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা বিষয়টি বুঝেছিলেন। অনেকেই নিজের জীবন দিয়ে সেই অবস্থানকে রক্ষা করেছেন—তাদের আজ ত্যাগ আমাদের আগামী গড়ে দিচ্ছে। সামনের পথ শুধু আইনি হিসাব-নিকাশে শেষ হবে না—প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস পুনর্গঠন। মানুষ কেন প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য সবকিছু ঝুঁকিতে ফেলতে প্রস্তুত হয়েছিল, এবং কীভাবে সেই বিশ্বাসের যোগ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়—এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আজকের রায় সেই দীর্ঘ যাত্রার প্রথম ধাপ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সম্পূর্ণ আস্থা রাখি, বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জগুলো সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার থাকলে ন্যায়বিচার শুধু টিকে থাকবে না, এ দেশে তা প্রতিষ্ঠা পাবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।