নিষিদ্ধ রাজনীতির ছায়া থেকে আলোতে ফেরার ইঙ্গিত বিশ্লেষকেরা বলছেন
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ২:০৭:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা
দীর্ঘদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় জামায়াতে ইসলামী এবার নীরবতার দেয়াল ভেঙে ফের রাজনীতির মাঠে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।সম্প্রতি একটি অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল প্ল্যাটফর্মে দলটির শীর্ষ নেতারা 'জাতীয় পুনর্গঠন' ও 'মূল্যবোধের রাজনীতি'র কথা বলছেন যা বিশেষজ্ঞদের চোখে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার নতুন কৌশল।
কী বলছে দলটি?
জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়,“আমরা রাজনীতি থেকে দূরে নই। কিন্তু এই দেশে রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তি এখন ক্ষমতাবানদের দয়া নির্ভর। আমরা শান্তিপূর্ণ ও ইসলামি আদর্শভিত্তিক একটি শাসনব্যবস্থার দাবি জানিয়ে যাব।” দলটির সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. মোজাহিদুল ইসলাম (নাম পরিবর্তিত) বলেন,“ইসলামি রাজনীতি মানে সহিংসতা নয়। আমরা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি জনতার আস্থার ভিত্তিতে।”
প্রশাসনের সতর্ক নজর
বিশেষ শাখা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে নজরে রাখছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন,“দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না হলেও জনমনে বিতর্কিত। তারা সরাসরি নাম ব্যবহার না করেও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক হাশেম বলেন,“জামায়াত এখন প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরতে চায়, কিন্তু তাদের কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়ে 'সোশ্যাল কনসার্ন' ও 'নৈতিক শুদ্ধতা'র বুলি তুলে ধরছে। এটি ভোটার মানস গঠনের প্রচেষ্টা।”
তিনি আরও বলেন,“এটা এক ধরনের ‘রিব্র্যান্ডিং’, যেখানে অতীত ভুল ভুলে ভবিষ্যতের সুযোগ খোঁজা হচ্ছে।”
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত নিয়ে এখনও মিশ্র মত।
একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন,“ওরা রাজনীতি করলে হোক, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানের দায় এখনো স্পষ্ট নয়।” অন্যদিকে এক মাদ্রাসাশিক্ষক বলেন,“যদি তারা সত্যিই ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে এগোয় এবং শান্তিপূর্ণ থাকে, তাহলে রাজনৈতিক অধিকার তাদেরও থাকা উচিত।”
নতুন মোড়: নির্বাচন সামনে রেখে হিসাব?
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠে হালকা কম্পন শুরু হয়েছে। জামায়াত চায় এমন একটি অবস্থান, যাতে দল নয়, আদর্শ সামনে রেখে তারা 'নতুন প্ল্যাটফর্মে' আসতে পারে।এটি সরাসরি জামায়াত না হয়েও, জামায়াতপন্থী একটি ব্যাকডোর এন্ট্রি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ফিরে আসা, নাকি কৌশলী ছায়া উপস্থিতি?
জামায়াত কি সত্যিই ফিরে আসছে, নাকি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একটি নতুন আবরণে পুরোনো রাজনীতির পুনরাবৃত্তি করছে?বাংলাদেশের ইতিহাস, জনমত এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধকে সম্মান না করে কেবল কৌশল পরিবর্তন করে ফিরলে সেটা কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে প্রত্যেক রাজনৈতিক শক্তিকে তাদের অতীতের দায় স্বীকার করতে হবে তবেই বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাবে।