শেখ হাসিনার রায়
প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৫:২৮:১৬
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ, প্রশ্নাতীতভাবে আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটি বলছে, রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো প্রধান বা কর্তা ব্যক্তি, রাজনৈতিক কোনো নেতা যতো বড় ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় তা এই রায়ে প্রতিষ্ঠিত হলো। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হয়ত ক্ষতিপূরণ সম্ভব না, তবে আজকের এই রায়ে তাদের হৃদয়ে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। কারণ সুবিচার তারা দেখতে পেলো বলেও প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রায়ের পর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি আইনের শাসন এবং বিচারের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ (১৭ নভেম্বর)। কারণ কোনো একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ সাজার রায় হলো আজ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং আপনারা দেখেছেন আমারও আজকে রায়ের দীর্ঘ সময় ধরে যে বিচারকরা রায় পড়েছেন সেখানে ফুটে উঠেছে যে অপরাধীরা কি পরিমাণ নিষ্ঠুর ঘৃণ প্রতিহিংসামূলক অপরাধ করেছে। তাদের পত্রপত্রিকা অডিও-ভিডিও তাদের টেলিফোনিক কনভারসেশনের যে সমস্ত তথ্য হুবহু ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, রায়ের মধ্যে কোট আনকোট সেগুলো পড়ে শোনানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি এই বিচারের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ কারো নেই। কারণ বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, নিরপেক্ষ হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। এর আগে মানবতা বিরোধী অপরাধের নামে জামায়াতে ইসলামীর প্রিয় নেতাদের ব্যাপারে যে বিচার হয়েছে ট্রাইবুনালে সেই বিচার নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়াতে এটা প্রশ্নবিদ্ধ, আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। সে বিচারের বাদী সাজানো, এজহার সাজানো, মামলা সাজানো, সাক্ষী সাজানো, বিচারক সাজানো, রায় সাজানো আদালতের চত্বর থেকে সাক্ষীকে গুমের বিষয়গুলো নতুন করে উত্থাপন করেন তিনি।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, আয়না ঘরে খুন-খারাবি করে ক্রসফায়ারে বিভিন্নভাবে শেষ করা হয়েছে, পিলখানা-শাপলা চত্বর, আরও বিচার প্রক্রিয়া তো সামনে আছে এটা প্রথম রায় আমরা পেলাম সেজন্য আমরা মনে করি সবগুলোরই নিরপেক্ষ স্বচ্ছ বিচার হওয়া উচিত আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে তাদের ক্ষতির পূরণ হয়ত কোনোদিন হবে না। কিন্তু কিছুটা স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। একটা সুবিচার তারা দেখতে পেল। এজন্য রাষ্ট্র বা সরকার তার কোনো প্রধান কর্তা ব্যক্তি, রাজনৈতিক কোনো বড় নেতা যতই ক্ষমতাবান হোক, তারা যে আইন এবং বিচারের ঊর্ধ্বে নয় এ রায়ের মধ্য দিয়ে আজকে সেটি প্রমাণিত হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যারা জুডিশিয়ারিতে থাকবেন, ম্যাজিস্ট্রেসিতে থাকবেন বিচারের এই বিরাট জিম্মাদারি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মানুষের জীবন মৃত্যুর ফয়সালার মতো দুনিয়ার বিচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করবেন এই রায় থেকে এই বিচারকদের প্রসিকিউশনে যারা ছিলেন তাদের দৃঢ়তা সাহসিকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যেন আমাদের দেশে আর কখনো বিচারক হোক, প্রশাসক হোক কেউ যেন ফ্যাসিবাদী না হয়ে ওঠেন, কর্তৃত্ববাদী না হয়ে ওঠেন, অত্যাচারী না হয়ে ওঠেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, ড. এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাোলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সেলিম উদ্দিন।