সময় কাউকেই ছাড় দেয় না। বয়স বাড়ে, গতি কমে, আর অনেকেই তখন ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলে রেখে নীরবে সরে যান। কিন্তু থিয়াগো সিলভা সেই মানুষদের দলে নন। বয়স তার জন্য শুধু একটি সংখ্যা—৪১ পেরিয়েও তিনি আবার ইউরোপের আলোয় ফিরেছেন।
চেলসি ও পিএসজির সাবেক এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করছেন পর্তুগালে। পোর্তোর সঙ্গে চুক্তি করে ইউরোপীয় ফুটবলে ফিরলেন সিলভা—যে ক্লাবের সঙ্গে তার গল্প শুরু হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে। ২০০৪-০৫ মৌসুমে তরুণ থিয়াগো খেলেছিলেন পোর্তো-বি দলের হয়ে। তখন কেউ জানত না, এই ছেলেটিই একদিন নিজের প্রজন্মের অন্যতম সেরা সেন্টার-ব্যাক হয়ে উঠবেন।
পোর্তো-বি থেকে শুরু, এরপর ডিনামো মস্কো। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে জায়গা করে নেন ফ্লুমিনেন্সের সিনিয়র দলে। ব্রাজিলের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপে পা রাখেন এসি মিলানে। সেখানেই বিশ্ব ফুটবল চিনতে শুরু করে থিয়াগো সিলভা নামটা। মিলানের হয়ে জেতেন সিরি-এ শিরোপা, গড়ে তোলেন এক অভিজাত ডিফেন্ডারের পরিচয়।
২০২১ সালে ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে থিয়াগো সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
২০১২ সালে পিএসজিতে যোগ দিয়ে সিলভা পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের সোনালি অধ্যায়ে। প্যারিসে কাটানো সময়ে জেতেন সাতটি লিগ শিরোপা, নেতৃত্ব দেন নতুন এক রাজত্বের। এরপর ২০২০ সালে, অনেকের চোখে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ নিয়ে পাড়ি জমান চেলসিতে। কিন্তু সেখানেও ভুল প্রমাণ করেন সন্দেহবাদীদের। নীল জার্সিতে জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগ—ক্যারিয়ারের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ করেন।
এতসব অর্জনের পর অনেকেই হয়তো অবসরের পথ বেছে নিতেন। কিন্তু সিলভা ভিন্ন। দুই বছর ফ্লুমিনেন্সে কাটিয়ে আবার ফিরেছেন ইউরোপে, ফিরেছেন নিজের শেকড়ে—পোর্তোতে। আজ ৪১ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে, তার ট্রফি ক্যাবিনেটে আছে ৩২টি শিরোপা।
ক্লাব পর্যায়ের সর্বোচ্চ মর্যাদার শিরোপা চ্যাম্পিয়নস লিগ হাতে থিয়াগো সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে প্রিমিয়েরা লিগের শীর্ষে থাকা পোর্তোর জার্সিতে সিলভা আবারও এক নতুন অধ্যায় লিখবেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া নয়, বরং অভিজ্ঞতার শক্তি দিয়ে আরও একটি শিরোপার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। অবশ্য আরও বড় লক্ষ্য তো সামনে ফুটবল বিশ্বকাপের জমকাল আসর।
কারণ থিয়াগো সিলভা জানেন—ফুটবল কখনো বয়স দেখে না, দেখে কেবল হৃদয়ের আগুন।