আপডেট :
২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২০:১৯
দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর ওভাল অফিসের বৈঠকগুলো রীতিমত যেন রিয়েলিটির শো হয়ে উঠেছে। কোনো না কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটছেই। আর তাই ওভাল অফিসে ট্রাম্প যখনই কারও সঙ্গে বৈঠকে বসেন তখন সংবাদমাধম্যসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর থাকে সেখানে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে যখন নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প, তখন সবার আগ্রহও তৈরি হয়ে তা নিয়ে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উদীয়মান গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক মামদানির বুঝি কোনো লড়াই হবে। কারণ রিপাবলিকানরা যে ইতোমধ্যেই মামদানিকে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে দাঁড় করাতে চায়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকে তেমন কিছুই ঘটেনি। তবে তাদের মধ্যকার বৈঠক কেমন ছিল?
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকটি অপ্রত্যাশিতভাবে খুব হৃদ্যতাপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। অনেকের ধারণার বাইরে গিয়ে ট্রাম্প নতুনরূপে যেন হাজির হলেন মামদানির সঙ্গে বৈঠকে। এমনকি স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এই দুইজনকে তাদের মতপার্থক্য এবং একে অপরের সম্পর্কে বলা রূঢ় কথাগুলো তুলে ধরে বারবার প্রশ্ন করছিলেন। তবে তারা দুজনই সে পথ এড়িয়ে গেলেন। বরং তারা নিজেদের মধ্যকার মিলগুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরলেন। আর ট্রাম্প তো রীতিমত মামদানির প্রশংসা করলেন। এই ক্ষেত্রে মামদানিকে নিয়ে ট্রাম্পের করা চারটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। মামদানিকে নিয়ে করা মন্তব্যগুলো হলো—
• আমার মনে হয় তিনি কিছু রক্ষণশীল মানুষকে বিস্মিত করবেন
• তার কিছু আইডিয়া সত্যিই আমার আইডিয়ার সঙ্গে মিল রয়েছে।
• আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি বিষয়ে আমরা একমত।
• আমি মনে করি এই মেয়র এমন কিছু করতে পারেন যা সত্যি খুব অসাধারণ হতে যাচ্ছে।
এ সময় এক সাংবাদিক উল্লেখ করেন, মামদানি যদি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হন তবে বরাদ্দ কমানোর হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। উত্তরে ট্রাম্প ইঙ্গিত করেন, প্রয়োজনে তিনি সেটা করতে পারেন। তবে তার সম্ভাবনা কম বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, তাকে সাহায্য করবো বলে আশা করছি, আঘাত নয়।
মজার ব্যাপার হলো ট্রাম্প এসব প্রশংসা সূচক মন্তব্য করলেও, মামদানি কিন্তু আক্রোশের কথা ভুলেননি। তার বক্তব্যে সেটার বহিঃপ্রকাশও ঘটে। ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধে যাওয়ার পরিবর্তে, তিনি ধারাবাহিকভাবে তার প্রিয় বিষয়: ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। আবার যেমন—গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সরকারের জড়িত থাকা নিয়ে কথা বলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মামদানি ভড়কে না গিয়ে নিজের অবস্থানে থেকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।
শেষের দিকে এক প্রতিবেদক মামদানিকে প্রশ্ন করেন, নিউইয়র্ক সিটি কি ট্রাম্পকে ভালোবাসে? উত্তরে মামদানি কথার মারপ্যাচে না গিয়ে স্পষ্টই বলেন তিনি ট্রাম্পকে ভালোবাসেন।
তিনি আরও বলেন, আমি আপনাকে বলতে পারি সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর জোর দেওয়ার কারণে আগের চেয়ে বেশি নিউইয়র্কবাসী ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। আমি সেই ক্রয়ক্ষমতার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।
এ-ও সত্য যে, বৈঠকে যে দুজনই একে অপরের সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলেছিলেন এমন নয়। তবে এটা মনে হয়েছে, ট্রাম্প তার নতুন বন্ধুর পক্ষে প্রতিরক্ষামূলক আচরণ করছিলেন। যখন এক প্রতিবেদক মামদানিকে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে চিহ্নিতের বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন ট্রাম্প মেয়রকে তার কথা এগিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন।