প্রকাশিত :
১০ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৫৪:১১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার ( ৯ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে রেজিস্ট্রারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছিল।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি স্যার ভিতরে আসব না?’ তখন রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট করতে বলেছি।’ তারপর আম্মার বলেন, ‘আপনি স্যার চিঠি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি অপসারণের চিঠি) আটকায় রাখছেন।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এই বেয়াদব ছেলে, কীসের চিঠি আটকায় রাখছি আমি?’ তখন আম্মার বলেন, ‘বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।’
রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমার সাথে বেয়াদবি কেন? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের? তখন সালাউদ্দিন আমার বলেন, ‘আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।’
সালাউদ্দিন আম্মারের পিছে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমরা কারা?’, তারা উত্তরে বলেন, ‘আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।’ তখন তিনি বলেন, ‘তোমরা আসো।’ তখন সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ওরা কথা বলবে! আমিও তো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।’ সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাদের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। আমাকে প্রতিটা দিনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে নাকি।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফিসারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলকে দেখিয়ে আম্মারকে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ডিন স্যার বাইরে ওয়েট করতেছিল। তুমি এর ভিতরে ঢুকেছ কেন?
আম্মার বলেন, ‘আমি ঢুকব না? আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি কেন ঢুকতে পারব না?’ রেজিস্ট্রার আম্মারকে বলেন, ‘গেট আউট? আম্মার বলেন, ‘কেন গেট আউট।’ রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘তুমি সবসময় মিথ্যাচার করো। এখানে বিএনপির কেউ নাই। তারা এনসিপির নেতাকর্মী।’ তখন আম্মার বলেন, ‘আপনার সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে মিটিং চলছে।’
রেজিস্ট্রার বলেন, ‘গেট আউট, আমার অফিসে আমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। এনারা (এনসিপির নেতাকর্মীরা) ১৫ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছে।’ আম্মার বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীর অধিকার আগে, এটা ইমার্জেন্সি। আমাকে এখানে আসতে হবে।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অবশ্যই ইমার্জেন্সি। তোমাকে ওখানে বসতে (ওয়েট) বলেছি।’ তখন এনসিপির এক নেতা এসে আম্মারকে বলেন, ‘আমরা বিএনপির কেউ না। আমরা এনসিপির নেতাকর্মী।’
ঘটনার পর রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুক পেজে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে টানা ২৩ দিন ধরে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। আমি ভিসি মহোদয়কে বারবার অনুরোধ করেছি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে অপসারণের আদেশে স্বাক্ষর করে তা রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠান। কাগজটি রোববার পর্যন্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে রাখা হয়। তিনি বিষয়টি জানতে রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ভিতরে মহানগর বিএনপির প্রোগ্রাম চলছে, পরে আসুন।’ এরপর সালাহউদ্দিন আম্মার ভিতরে প্রবেশ করলে সেখানে শুরু হয় বাগ্বিতণ্ডা।
আম্মারের দাবি, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু না হলেও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক এবং সিনেট সদস্য। এভাবে আমার পদ মর্যাদাকে অসম্মান করা হয়েছে।’
তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ জানান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির বিষয়ে আইনগত সব দিক বিবেচনা করে সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। ১২টার পর ভিসি স্যার-এর ফাইনাল অ্যাপ্রুভ হয়। এরপর অফিসিয়াল বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ যেটা নরমালি একদিন লাগেই। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করি যে আজ দেওয়া যায় কি না। বিকেলে শেষ মুহূর্তে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা দেখা করতে গেলে তখনও স্মারক নম্বর বসানোসহ কিছু কাজ বাকি ছিল। তাদের বুঝিয়ে বলায় অত্যন্ত ভদ্রতার পরিচয় দিয়ে তারা চলে যায়। আমি তাদের বলেছি রেডি হলে আজ পাবে; আর তা না হলে আগামীকাল পাবে। এর সঙ্গে আম্মারের যাওয়া; না যাবার কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমার দপ্তরে সবাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই আসেন। এনসিপি নেতারা এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন, আজ তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। তখন কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন। ঠিক তখনই আম্মার এসে বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমি তাকে বলি, তুমি বিনা অনুমতিতে আমার রুমে কেন ঢুকেছ?’ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের বিষয়ে এখন প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, শিক্ষার্থীদের আর কিছু করার নেই। কিন্তু সে সেখানে গিয়ে মিথ্যাচার করে বলেছে আমি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলাম। এটা তার স্বভাবসুলভ আচরণ।
তবে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের নয়; বরং এনসিপির নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছিল বলে জানান এনসিপির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ।
তিনি জানান, কাকতালীয়ভাবে, খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গেছি আজকে! সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্টার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডার সময় ওখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতারা ছিল। আমরা ওখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির নেতাকর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়।
উল্লেখ্য, রাবিতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ২৩ দিন ধরে আন্দোলন করছে। এ সময়ে বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ থেকে চেয়ারম্যান প্রফেসর এনামুল হককে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে সাইকোলজি বিভাগে আগের পদে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী অধ্যাপক তরুন হাসানকে। রোববার প্রশাসন থেকে এই আদেশ জারি করা হয়।