চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে ক্ষোভ, সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ১২:৫৮:৪৪
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের মতো ২০২৩ সালের পুরস্কার তালিকা প্রকাশের পর আবারও বিতর্কে ঘিরে ফেলেছে এই পুরস্কারকে। অভিযোগ উঠেছে যোগ্যতার চেয়ে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, পুরস্কার তালিকায় উঠছে অচেনা নাম, বাদ পড়ছেন সমালোচক ও দর্শকপ্রিয় শিল্পীরা। সামাজিক মাধ্যমে এই পুরস্কার বিতরণকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। পুরস্কার পাওয়া একাধিক শিল্পীর নাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকও।
বিশ্বজিৎ-ফারিয়া বিতর্ক: ২০২৩ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পান নুসরাত ফারিয়া, তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘পাতালঘর’-এর জন্য। কিন্তু বিতর্ক তৈরি হয় এই সিনেমা নিয়েই। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ ছিল, সীমিত সংখ্যক হলে মুক্তি পায় এবং দর্শক-সমালোচক উভয়েই উপেক্ষা করেন। চলচ্চিত্র গবেষক তানভীর আদনান বলেন, “যে সিনেমার নাম দর্শকের কাছে অজানা, সেই ছবির অভিনেত্রী জাতীয় পুরস্কার পান এটা প্রশ্ন তো তুলবেই। এখানেই দেখা যায় স্বচ্ছতা ঘাটতি।” একইভাবে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নবাগত অভিনেতা বিশ্বজিৎ নন্দী, যাঁর সম্পর্কে চলচ্চিত্র জগতেও অনেকে অবগত নন।
তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন পরিচিত মুখ?
বছরের অন্যতম জনপ্রিয় ছবি ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ও ‘দামাল’ এই তিনটি ছবির প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কেউই এই বছর কোনও মূল বিভাগে পুরস্কার পাননি। অথচ এই ছবিগুলোই বক্স অফিসে সফল হয় এবং সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়ায়। অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, “পুরস্কার না পেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু যখন দেখি এমন কেউ পুরস্কার পান যাঁর সিনেমা কেউ দেখেনি, তখন কষ্ট হয়।”
ফেডারেশনও ক্ষুব্ধ: ‘নীতিগত পরিবর্তন দরকার’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফেডারেশনের সদস্য ও পুরস্কার যাচাই কমিটির এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি সিনেমা হলে মুক্তি না পেলে, যথাযথ পর্যালোচনার সুযোগ না থাকলে, তা পুরস্কার তালিকায় না তোলাই শ্রেয়। কিন্তু সুপারিশে যাঁরা থাকেন, তাদের নামই চলে আসে।” তিনি বলেন, স্বজনপ্রীতি এখন অপ্রকাশ্য বাস্তবতা।
বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই?
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মূলত তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। নির্ধারিত একটি কমিটি প্রতি বছর মনোনয়ন যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দাবি এই প্রক্রিয়ায় নেই পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা, নেই শিল্পী সংগঠনের অংশগ্রহণ। চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, “পুরস্কার যখন শিল্পীদের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয় না, তখন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্থহীন হয়ে পড়ে।
সর্বোচ্চ স্বীকৃতিকে বাঁচাতে জরুরি সংস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কেবল পদক নয়, এটি একজন শিল্পীর জীবনব্যাপী পরিশ্রমের স্বীকৃতি। সেই স্বীকৃতিই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে পুরো চলচ্চিত্র শিল্প একটি নৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। যথাযথ মানদণ্ড, পরিচিতির চেয়ে অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া, বিচার প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যম ও শিল্পী সংগঠনের অংশগ্রহণ এসবই নিশ্চিত করা না গেলে পুরস্কার নয়, বিতর্কই হবে জাতীয় স্বীকৃতির একমাত্র পরিচয়।