প্রকাশিত :
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৭:৪২
কিছু নাম থেকে যায় যুগ যুগান্তরে, বিপ্লবী সূর্য হয়ে জাগে প্রতিটি প্রান্তরে। কিছু মৃত্যু যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে তৈরি করে ইতিহাসের মশাল। শরীফ ওসমান বিন হাদি, যিনি গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের কাছে পরিচিত ওসমান হাদি বা হাদি ভাই নামে। আততায়ীর গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদী সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। সেই সঙ্গে পুরো দেশে যেন নেমে আসে শোকের ছায়া। দেশের আপামর জনতা যারা কখনো ওসমান হাদীকে চোখেও দেখেননি তার জন্য মাতম শুরু করেন।
বিপ্লবী এই জুলাই যোদ্ধা ছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধীদের সামনের কাতারে। এমনকি কেউ তাকে ঘৃণা করলেও তাকে বুকে টেনে নেওয়ার ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। ওসমান হাদির বিখ্যাত উক্তি ছিল ‘জান দেব জুলাই দেব না’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে জিইয়ে রাখতে নিজ হাতে গড়েছেন ইনকিলাব মঞ্চ, সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের মোকাবেলায় গড়ে তুলেছিলেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার।
নিজের দেশপ্রেম আর আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে এই বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জনগণের হয়ে কথা বলারও। তাই আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থীও হয়েছিলেন স্বতন্ত্রভাবে। সে সময় তার নির্বাচনী প্রচারণায় অনেকেই অনুদান নিয়ে এসেছেন সামর্থ্য অনুযায়ী। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। একবার বলেছিলেনও তার বুকে গুলি চালানোর আগে তিনি ভিন্ন মতের কাউকে প্রতিরোধ করবেন না। তবে আবেদন জানিয়েছিলেন তাকে হত্যা করা হলে যেন হত্যাকারীর বিচার করা হয়, যাতে আগামীতে আর কোনো বিপ্লবীকে জীবন দিতে না হয়। কিন্তু তাই সেই সামান্য আবেদনও রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকায় ঘাতকরা তাকে গুলি করে। তারপর থেকে অধরাই থেকে যায় হামলাকারীরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার দ্রুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় ওসমান হাদিকে।
বিপ্লবী হাদি চেয়েছিলেন হাসতে হাসতে শহীদ হতে। সৃষ্টিকর্তাও তার মনোবাঞ্ছনা অপূর্ণ রাখেনি। সবাইকে কাঁদিয়ে বৃহস্পতিবার মৃত্যুর দুয়ারে চলে যান তিনি। হামলার এক মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন হাদি। এসব হুমকির মধ্যে ছিল তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া এবং পরিবারের নারী সদস্যদের ক্ষতি করার বার্তা। কিন্তু তারপরও তিনি জানান, এসব হুমকি তাকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে না।