বাংলাদেশের মানুষের আশংকা, এই দলটাকে ভোট দিয়ে আমরা আওয়ামি লীগের মত আরেকটা লুটেরা নিপীড়ক শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসছি কিনা?
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০:১৬
বন্ধু, সহকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন মানুষের সাথে আলাপ করে, ডাকসু ও জাকসুতে ছাত্রদলের শোচনীয় পরাজয়ের একটা সিম্পল কারণ খুঁজে পেলাম। এই কারনটির সাথে রাজাকার ট্যাগ , বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনীতির উত্থানে এবং শিবিরের অর্গানাইজেশনাল ক্যাপাসিটিরও কোনো সম্পর্ক নেই।
কারনটি খুব সহজ,
ছাত্রছাত্রীরা জাতিয়তাবাদি ছাত্রদলের মধ্যে একটা ছাত্রলীগ হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যেন সেটা না হতে পারে।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের একজন শিক্ষকের সাথে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বললেন, সাদিক কায়েম এমন কি নির্বাচনের দিনেও একজন সাধারন ছাত্রের মত একজন কি দুইজন সাথে নিয়ে চলাফেরা করেছে। তাকে যখন বলেছি, তুমি এখানে কেন, এখানে তো প্রার্থীর আসার সুযোগ নেই—তখন সে “সরি স্যার” বলে চলে গেছে।
অন্যদিকে আবিদ বা হামিমের সাথে ১৫/২০ জনের ক্যাডার ছিল। তার হয়তো কোনো খারাপ নিয়ত নেই, কিন্তু তার ক্যাডার পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা এবং উপস্থিতি
সবার জন্য ইন্টিমিডেটিং ছিল —যা সবাইকে বারবার ছাত্রলীগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
এইটা একটা উদাহরণ এই ধরনের আরও অসংখ্য রেফারেন্স ছাত্র ছাত্রীরে দিতে পারবে।ছাত্রছাত্রীরা ধরে নিয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং ছাত্রদল একটা ছাত্রলীগের মতো পেটোয়া বাহিনিতে রূপান্তরিত হতে পারে। তাদের উপরে ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের নিপীড়নের যে ট্রমা, সেটার বিকল্প তারা ছাত্রশিবিরে খুঁজে পেয়েছে।
ফলে তারা ছাত্র দলকে রিজেক্ট করেছে এবং ছাত্র শিবিরকে গ্রহণ করেছে।অর্থনীতিতে এক্সপেক্টেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মুল্যস্ফিতির মত একটা বিষয় এক্সপেক্টেশান থেকে আসে।
আপনি যেইটা প্রত্যাশা করবেন সেইটা আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে। আর মানুষের এক্সপেক্টেশন তৈরি হয় সিগনালিং থেকে।সাদিক কায়েমদের নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে ও পরের পুরো সিগনালিং হচ্ছে মডারেশন ও মধ্যপন্থার । এই মডারেশন শুধু আইডেন্টিটি বেইজড নয়, এটা তাদের রাজনৈতিক আচরণেরও। তারা সিগন্যাল দিয়েছে—আমি নিপীড়ক হবো না, আমি আবার গণরুম সংস্কৃতি তৈরি করবো না, আমি আবার জোর করে মিছিলে নিয়ে যাবো না।ছাত্রদল সেই ধরনের সিগনালিং করতে শুধু ব্যর্থ হয়নি, তারা বরং তাদের আচরণ, কথাবার্তা, রাজনীতি, ব্যবহারে ছাত্রছাত্রীদের আশঙ্কাকে ভ্যালিডেট করেছে।
ধরুন, নির্বাচনের দিন ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে ছাত্রদলের গণেশ চন্দ্র রায়ের ভিসির সাথে বেয়াদবি। ভিডিওটা দেখে আমি নিজেই নিন্দা জানিয়েছিলাম। আমার স্ট্যাটাসে বিএনপির সমর্থকেরা গালির বন্যা বইয়ে দিয়েছে যে—কুয়েটে জিয়া হাসান কোথায় ছিলেন। তারা বুঝতেই সক্ষম হচ্ছেন না, ডাকসু সব কিছু নয়, এই লিখন পুরো দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী আর নাগরিককে হেলমেট বাহিনির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ফলে ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রদলকে শুধু ডাকসুতেই রিজেক্ট করেনি, জাকসুতেও রিজেক্ট করেছে, এবং সারা দেশে এই পরিণতি হবে।এই একই সিগনালিং বিএনপি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতেও দিচ্ছে। এটা বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ৭১, ২৪, রাজাকার ইস্যু, জামাত-শিবিরের অর্গানাইজেশনাল ক্যাপাসিটি ইত্যাদি আগামী নির্বাচনের প্রধান ইস্যু নয়।
প্রধান ইস্যু হচ্ছে—বাংলাদেশের মানুষের আশংকা, এই দলটাকে ভোট দিয়ে আমরা আওয়ামি লীগের মত আরেকটা লুটেরা নিপীড়ক শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসছি কিনা।মানুষ বিএনপির মধ্যে আরেকটা আওয়ামী লীগ দেখতে পাচ্ছে, যে ভয় বাংলাদেশের মানুষের ইসলামভিত্তিক রাজনীতির ভয়কে ছাপিয়ে সাধারণ মানুষকে জামাতমুখী করছে।
বিএনপি কি এটা বোঝে না? বিএনপির শীর্ষ নেতারা বোঝেন কিন্তু সো-কোল্ড তৃণমূল সেই বোঝাপড়া রাখে না।আমার একজন কাছের বন্ধু সাম্প্রতিক কালে তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতে জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনি জিয়া হাসানকে কিভাবে দেখেন?”তারেক রহমান বলেছিলেন, “উনারা এই সমালোচনাগুলো না করলে আমার জন্য দল চালানো মুশকিল হয়ে যাবে।”
মন্তব্যটিতে খুবই অবাক হয়েছি এবং তারেক রহমানের উপরে প্রথম বার জেনুইনলি ইম্প্রেসড হয়েছি।কিন্তু তারেক রহমানের প্রাইভেট মন্তব্য নয়, গণেশ রায়দের পাব্লিক আচরন বিএনপির প্রতি সাধারন মানুষের এক্সপেক্টেশান নির্মাণ করতেছে - যেইটাতে বিএনপিকে ঠিক আওয়ামি লীগের মত একটা দল মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী আমলের লুটপাট, মাস্তানি, দখলদারি ও চাঁদাবাজির অবসান চায়। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা সিগন্যাল দিচ্ছে যে, তারা সেইগুলো ফিরিয়ে আনবে অন্য দিকে শিবির বা জামায়াত দিচ্ছে, তারা সেই লুটপাট, মাস্তানি, দখলদারি ও চাঁদাবাজির অবসান ঘটাবে।ফলে মানুষ এখন আর যুদ্ধাপরাধ বা সমাজে ইসলামি বয়ান কেন্দ্রিক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার আশংকাকে প্রধান ইস্যু হিসেবে দেখছে না।
ফলে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির আওয়ামি লীগের নিপীড়ন ফিরিয়ে আনার আশঙ্কার বিপরীতে জামায়াতের সুশাসন দেওয়ার গল্পটা বিশ্বাস করা শুরু করেছে।তারেক রহমান যদি ফিরে এসে নাটকিয় ভাবে এই স্রোতটা ঠেকাতে না পারেন, তবে এই বিশ্বাসটা আগামী কয় মাসে গণজোয়ারে পরিণত হলে আমি অবাক হবো না।
জিয়া হাসানের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।