ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নেতা রিয়াদ একসময় ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার, গ্রামের গরিব পরিবারে জন্ম
প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৫:৪৫
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ একসময় ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মী। এরপর তিনি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য হিসেবে পরিচিত হন। গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
রিয়াদের গ্রাম নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের নবীপুর বাজার সংলগ্ন এলাকা। তার পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। দাদা ও বাবা দুজনেই ছিলেন রিকশাচালক। বর্তমানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন বাবা আবু রায়হান। মা নাজমুন নাহার অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এই অবস্থায় রিয়াদকে পড়াশোনা করিয়ে শহরে পাঠান তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রিয়াদ ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জের সরকারি কলেজে। তখন ছাত্রলীগে যোগ দেন এবং বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ হন। পরে ঢাকায় এসে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যুক্ত হন ‘কোটাবিরোধী’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনে। আন্দোলনের মুখোশ পরে ঢাকায় রাজনীতির ছত্রছায়ায় গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট।
গ্রামবাসী জানায়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রিয়াদের আচরণ ও জীবনযাপনে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। গ্রামের পুরনো ভাঙা বাড়ির পাশে পাকা ঘর নির্মাণ ও দামি গাড়ি কেনায় স্থানীয়দের সন্দেহ দানা বাঁধে।
রিয়াদের মা বলেন, “ছেলেকে না খেয়ে শহরে পাঠিয়েছি, সে চাঁদাবাজি করেছে এটা বিশ্বাস হয় না। কেউ ষড়যন্ত্র করে ওকে ফাঁসিয়েছে।”
রিয়াদের স্কুলের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, “স্কুলে সে ছিল দরিদ্র ছাত্র। তার বাবার পক্ষে পড়ার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। সে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলো, তা বিস্ময়ের।”
পুলিশ বলছে, রিয়াদ রাজধানীতে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি। ফ্রেমে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব ছবি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, এমন আরও রিয়াদ যদি সমাজে লুকিয়ে থাকে, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।