পোশাক খাতে লুকিয়ে থাকা নির্মম বাস্তবতা দীর্ঘ সময় কাজ
প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০২৫, ৪:৩৪:৫৭
ঘামের গন্ধে তৈরি পোশাক পাঠানো হয় বিদেশে, কিন্তু সেই ঘামে লুকানো থাকে এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। শিশু নয়, কিশোর নয় এ যেন পুরো এক প্রজন্ম বন্দি শ্রমের শিকলে! অনুসন্ধান বলছে, এই দাসত্বের নেপথ্যে রয়েছে ছদ্ম-চুক্তি, ভুয়া বয়সপ্রমাণ আর ঠুনকো নৈতিকতা। "যেখানে আইন খাতায়-কলমে আছে, বাস্তবতায় তা যেন বিলুপ্ত এক ন্যায়বোধ!" ঢাকার গার্মেন্টস এলাকার একটি অলিগলিতে সন্ধ্যায় দেখা মিলল ১৩ বছর বয়সী মেহেদীর। দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ, মাসে মজুরি মাত্র ৪৫০০ টাকা। স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করতেই কিশোরের চোখ নেমে গেল, বলল, “স্কুলে গেলে চাল কিনব কিভাবে?” চ্যানেল আইয়ের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও ভয়ংকর চিত্র। একাধিক নামী পোশাক কারখানায় দেখা গেছে, শ্রমিক নিয়োগের সময় বয়সপত্র জাল করে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া কাগজ। শিশুরা কাজ করছে, কিন্তু কাগজে তারা 'প্রাপ্তবয়স্ক'।
আধুনিক দাসত্বের চিত্র
জাতিসংঘের মতে, আধুনিক দাসত্ব মানে হচ্ছে কোনো ব্যক্তি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে কাজ করছে এবং তার মুক্তি বা বিকল্প নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকে এখন এই সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থা ‘Walk Free Foundation’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় আধুনিক দাসত্ব সবচেয়ে বেশি হয় পোশাক ও নির্মাণ খাতে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত এই তালিকার ওপরেই।
বিশেষজ্ঞের মতামত
মানবাধিকার গবেষক তানভীর হাসান বললেন, “শিশুশ্রম এখন অনেকটাই প্রতীকী শব্দ। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ১৪-১৭ বছর বয়সীদের দিয়ে এমন পরিমাণ শ্রম আদায় করা হচ্ছে, যা ইউরোপে কারাগারে বন্দিদেরও দেওয়া হয় না।”
“এই শিশুরা এখন আর স্কুলে যায় না, তারা সেলাই করে নিজেদের ভবিষ্যৎই গিলে খাচ্ছে!” — তানভীর হাসান
বিশ্বের আলোচনায় বাংলাদেশ
বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে একই বাস্তবতা। যদিও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো দায়িত্ব অস্বীকার করে বলছে, “আমরা তৃতীয় পক্ষ দিয়ে অডিট করাই।” কিন্তু অডিটের আগেই যে ‘ছেলেটি’ কারখানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা অডিটে দেখা যায় না!
সস্তা শ্রমের লোভে আমরা হারাচ্ছি একটি প্রজন্ম। এই আধুনিক দাসত্বের চক্র ভাঙবে কে? শ্রম আইন, নাকি মানবতার চিৎকার? নাকি আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া কোনো পরিবর্তনই আসবে না? প্রশ্ন রয়ে যায়।