প্রকাশিত :
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৩০:৫৩
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘ভোটের গাড়ি’ শীর্ষক প্রচারণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০২৬ সালের গণভোট সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতেই এই প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি দেশের মালিক। এদেশ আগামী পাঁচ বছর আপনার পক্ষে কে চালাবে সেটা আপনি ঠিক করুন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিন। চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিন।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশেষভাবে তরুণ সমাজ, নারী ভোটার ও প্রথমবারের মতো হওয়া ভোটারদের এগিয়ে আসতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তরুণ সমাজ, নারী ভোটার ও প্রথমবারের ভোটারদের প্রতি-আপনারা এগিয়ে আসুন। প্রশ্ন করুন, জানুন, বুঝুন ও ভোট দিন। আপনার সিদ্ধান্তে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ।’
ভয়হীন ও মুক্ত পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে থাকবে না ভয়, থাকবে না বাধা-থাকবে কেবল জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মত প্রকাশ। সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘ভোটাধিকার কারো দয়া নয়। এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি, আমাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলুন, ভোট দিই-নিজের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, নতুন পৃথিবীর জন্য।’
‘ভোটের গাড়ি’ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়ি নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দ বাণী বহনকারী বহর। এটি জানিয়ে দেবে, আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। জনগণ এই সনদে সমর্থন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সনদের পক্ষে থাকলে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি-সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। গণতান্ত্রিক এই যাত্রাকে সফল করতে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।