প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০০:৩৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এখন শুধু তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেটেড (Meta) বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তাদের Content Monetization Beta Program চালু করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের কনটেন্ট নির্মাতারাও এখন ফেসবুকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে মেটা ঘোষণা দেয়, তারা আগের In-Stream Ads, Ads on Reels, এবং Performance Bonus Program-কে একত্রিত করে একটি একক কাঠামোতে আনছে— যার নাম দেওয়া হয় Facebook Content Monetization (Beta)। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাতারা ভিডিও, রিলস, এবং লাইভস্ট্রিম— তিনটি মাধ্যম থেকেই রাজস্ব আয় করতে পারবেন।

নতুন কাঠামোতে কীভাবে আয় হয়
ফেসবুক কনটেন্ট থেকে আয় নির্ভর করে মূলত CPM (Cost Per Mille) বা প্রতি এক হাজার ভিউয়ের আয়ের উপর। ভিউ যত বেশি এবং দর্শক যত উন্নত বিজ্ঞাপন বাজারের দেশ থেকে আসে, আয়ও তত বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গড় CPM যেখানে ৪ থেকে ১২ ডলারের মধ্যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তা অনেক কম— সাধারণত ০.০৫ থেকে ০.৩০ ডলার।
একটি ভিডিও ১৫ মিলিয়ন (১.৫ কোটি) ভিউ পেলে আয় আনুমানিক ১,১০০ থেকে ১,২০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যদি দর্শকসংখ্যার বড় অংশ উচ্চ-আয়ের দেশগুলো থেকে আসে। এই আয় আরও কম বা বেশি হতে পারে কনটেন্টের ধরন, ভিউ ডিউরেশন, ও বিজ্ঞাপনপ্রদর্শনের ধরন অনুযায়ী।
যোগ্যতা ও শর্তাবলি
Meta জানিয়েছে, কনটেন্ট মনেটাইজেশনের জন্য ক্রিয়েটরদের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইলকে “Professional Mode” এ রূপান্তর করা,
এবং Meta-র Partner Monetization Policy মেনে চলা।
একইসঙ্গে কনটেন্টে কপিরাইট লঙ্ঘন, ঘৃণামূলক বক্তব্য বা মিথ্যা তথ্য প্রচার হলে মনেটাইজেশন বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ ফেসবুকে সক্রিয়, যা স্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি বিশাল বাজার তৈরি করছে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো, বিজ্ঞাপনদাতাদের সীমিত অংশগ্রহণ, এবং আন্তর্জাতিক দর্শক টার্গেটিং-এর অভাব এখনো বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়েছে।
তবুও অনেক নির্মাতা এখন বিদেশি দর্শকদের লক্ষ্য করে ইংরেজি সাবটাইটেলসহ ভিডিও তৈরি করছেন। তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছানোই আয় বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
Meta’র বক্তব্য
Meta এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা চাই প্রতিটি ক্রিয়েটর তাদের সৃজনশীল কাজের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক পাক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে ধীরে ধীরে কনটেন্ট মনেটাইজেশন বিস্তৃত করা হচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেসবুকের এই সম্প্রসারণ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন এক “ডিজিটাল ক্রিয়েটর অর্থনীতি”-র সূচনা ঘটাবে। স্থানীয়ভাবে এর প্রভাব শুধু কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, সামগ্রিক ডিজিটাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য হতে পারে।
লেখক : মো: আবুল বাশার
হেড অব সোস্যাল অ্যান্ড আইটি
নাগরিক প্রতিদিন