প্রকাশিত :
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:৩০:৪৭
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মকাণ্ডের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একজন সাবেক কমিশনারসহ ৫ জনের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামতকে দমন করতে ‘বাধ্য’ করার চেষ্টা করেছিল এই মৌলবাদি ব্যক্তিরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই উগ্রপন্থী কর্মী এবং আক্রমণাত্মক এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে অনেক বিদেশি রাষ্ট্র কঠোর বিধিনিষেধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমেরিকান বক্তা এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলোকেই তারা লক্ষ্য করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পর ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক শীর্ষ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক থিয়েরি ব্রেটন অবশ্য এটিকে একটি ‘চিরুনি অভিযান’ চলছে বলে উল্লেখ করেছেন।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্রেটনকে ইইউর ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট বা ডিএসএ এর ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর উপর কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কিছু মার্কিন রক্ষণশীলদের ক্ষুব্ধ করেছে, যারা এটিকে ডানপন্থী মতামতকে দমন করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। ইইউর নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গেও ব্রেটনের বিরোধ রয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি তাদের ব্লু টিক ব্যাজের জন্য সামাজিক মাধ্যম এক্স-কে ১২০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছে। যা ডিএসএ এর অধীনে করা প্রথম জরিমানা।
এই প্ল্যাটফর্মের ব্লু টিক পদ্ধতিকে ‘প্রতারণামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। কারণ সংস্থাটি ‘ব্যবহারকারীদের অর্থপূর্ণভাবে যাচাই’ করছিল না। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, মাস্কের সাইট কমিশনকে তার প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে বিরত রাখে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে ব্রেটন বলেছেন, ‘আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের উদ্দেশ্যে: সেন্সরশিপ আপনার ভাবনার জায়গায় নেই।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন ইনডেক্স বা জিডিআই এর নেতৃত্বদানকারী ক্লেয়ার মেলফোর্ডও এই তালিকাভুক্ত ছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সারা বি রজার্স জিডিআই-কে ‘আমেরিকান বক্তৃতা ও সংবাদমাধ্যমের সেন্সরশিপ এবং কালো তালিকাভুক্তির জন্য’ মার্কিন করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।
যদিও জিডিআই-এর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞাগুলো বাকস্বাধীনতার উপর একটি কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ এবং সরকারি সেন্সরশিপের একটি জঘন্য কাজ।’
‘ট্রাম্প প্রশাসন আবারও, তাদের ভিন্নমত পোষণকারীদের ভয় দেখানো, সেন্সর করা এবং দমন করার জন্য ফেডারেল সরকারের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করছে। আজ তাদের কর্মকাণ্ড অনৈতিক, বেআইনি এবং আমেরিকান সুলভ নয়।’
অনলাইনে ঘৃণা এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেট বা সিসিডিএইচ এর ইমরান আহমেদকেও নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রজার্স আহমেদকে ‘মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে সরকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী’ বলে অভিহিত করেছেন।
মন্তব্যের জন্য সিসিডিএইচ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি।
এছাড়াও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন জার্মান সংস্থা হেটএইডের আনা-লেনা ভন হোডেনবার্গ এবং জোসেফাইন ব্যালন, যারা ডিএসএ কার্যকর করতে সাহায্য করেছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, দুই সিইও এটিকে ‘সরকারের দমন-পীড়নের এমন একটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন যারা ক্রমবর্ধমানভাবে আইনের শাসনকে অবজ্ঞা করছে এবং যেকোনো উপায়ে তার সমালোচকদের চুপ করানোর চেষ্টা করছে। মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের নীরব করার জন্য সেন্সরশিপের অভিযোগ ব্যবহার করে, এমন একটি সরকারকে আমরা ভয় পাব না এই বক্তব্যও তারা যোগ করেন।’
রুবিও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সেন্সরশিপ-শিল্প কমপ্লেক্সের এজেন্টদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তার আমেরিকা ফার্স্ট পররাষ্ট্র নীতি আমেরিকান সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন প্রত্যাখ্যান করে। আমেরিকান ভাষণকে লক্ষ্য করে বিদেশী সেন্সরদের বহির্মুখী হস্তক্ষেপও এর ব্যতিক্রম নয়।’