স্ত্রীর সম্পদে স্বামীর কতটুকু অধিকার আছে? দেনমোহর নিয়ে ইসলাম কী দিকনির্দেশনা দিয়েছে, জানুন বিশদে।
প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২৫, ৪:০৮:১৭
বিয়েতে দেনমোহর ফরজ: স্ত্রীর অর্থে কেন অধিকার নেই স্বামীর?
বিয়ে শুধু সামাজিক রীতি নয় ইসলামে এটি একটি ইবাদত। আর এই ইবাদতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব, যার নাম দেনমোহর। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, বিয়ের সময় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ প্রদান করা ওয়াজিব (ফরজ)।
দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয় বিয়েতে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—
"যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।"
(সহিহ আল-জামিউস সাগির, হাদিস: ৬১৪৮; তাবরানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮)
বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষ একে অপরের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন, যাতে পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারিত হয়। ইসলাম এই চুক্তিকে পবিত্র এবং ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে দেনমোহরের বিধান দিয়েছে।
দেনমোহর আদায় না করা অন্যায় বিয়ে করার সময় বা পরে দেনমোহর স্ত্রীকে প্রদান করা স্বামীর ওপর বাধ্যতামূলক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমাজে দেনমোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ ও অন্যায়।
আল্লাহ বলেন—
“তোমরা তাদেরকে বিয়ে করলে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না, যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহর দাও।”
(সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ১০)
“...তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।”
(সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫)
স্ত্রীর অর্থ সম্পূর্ণ তার মালিকানাধীন
দেনমোহর আদায়ের পর সেই অর্থের মালিক শুধু স্ত্রী। ইসলামী শরিয়তে, স্বামীর সে অর্থে কোনো অধিকার থাকে না, যতক্ষণ না স্ত্রী নিজে তা তাকে উপহার দেন বা স্বেচ্ছায় মাফ করেন।
একটি প্রশ্ন প্রায়শই আসে স্ত্রী যদি মোহরের অর্থ দিয়ে ঘরের আসবাবপত্র কিনে আনেন, তাহলে তা কি সবার?
উত্তর হলো—না।
সেগুলোর মালিক স্ত্রী নিজে। যেহেতু ইসলামে নারীর অর্থ ও সম্পদের স্বাধীন মালিকানা আছে, তাই তার টাকায় যা কেনা হবে, তা তার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
“আর তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।”(সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
তবে স্ত্রী যদি সেই আসবাব পরিবারে ব্যবহার করতে দেন, সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত জিনিসের ক্ষেত্রে তার অনুমতি বাধ্যতামূলক।
ইসলাম বিয়েতে উৎসাহ দেয় কেন?
ইসলাম শুধু বিয়ের বিধান দেয়নি, বরং এই সম্পর্ককে উৎসাহিত করেছে। কারণ বিয়ে একজন মুসলিমের নৈতিক নিরাপত্তা, চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত এবং সমাজে সুস্থ মানবিক সম্পর্ক গঠনের একটি নিরাপদ উপায়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যেন বিয়ে করে। এটি দৃষ্টি অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
উপসংহার
বিয়ে যেমন দ্বীনের অর্ধেক, তেমনি দেনমোহর হচ্ছে সেই ইবাদতের অর্থনৈতিক দিক। এটিকে অবহেলা করা মানে নারীর হক নষ্ট করা। ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী তার সম্পদের উপর পূর্ণ অধিকার রাখে। স্বামী বা অন্য কেউ সেই সম্পদে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, যতক্ষণ না তা স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়।এই শিক্ষাটি সমাজে প্রচার হওয়া দরকার, যেন নারীর অর্থনৈতিক অধিকার হেফাজত হয় এবং ইসলামী বিয়ের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়।